The Our Don Don Special বৌদ্ধ বিহার ট্র্যাজেডির ৯ বছর : উত্তমের খোঁজ মেলে নি আজও

বৌদ্ধ বিহার ট্র্যাজেডির ৯ বছর : উত্তমের খোঁজ মেলে নি আজও




ডন প্রতিবেদক, কক্সবাজার : নয় বছর আগে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধদের উপর হামলার সময় বলা হয়েছিলো, এই সম্প্রদায়ের উত্তম কুমার বড়ুয়ার ফেসবুক পেজ থেকে ‘ধর্ম অবমাননাকর’ ছবি দেওয়া হয়েছে।

ধর্মীয় উত্তেজনা ছড়িয়ে তুলে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহার পুরোপুরি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ধ্বংস ও লুট করা হয় আড়াইশরও বেশি দুর্লভ বৌদ্ধমূর্তি। একইভাবে রামু ও উখিয়ার আরও ১৮টি বিহারে হামলা ও আগুন দেওয়া হয়, হামলা হয় বৌদ্ধ বসতিতেও।

পরে পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে, পরিকল্পিতভাবে উত্তমের ফেসবুক পেজে ‘ভুয়া ছবি’ ট্যাগ করে রামু বাজারে বসে সেই ছবি দেখিয়ে উস্কে দেওয়া হয় স্থানীয় মুসলমানদের।

কিন্তু তখন উত্তমের হদিস পাওয়া যায় নি। তারপর ৯ বছর কেটে গেলেও এখনও মেলে নি তাঁর কোনও সন্ধান।

রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের হাইটুপি গ্রামের সুদত্ত বড়ুয়ার ছেলে উত্তম রামু সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখকের কাজ করতেন।

নয় বছর আগে উত্তমের স্ত্রী রিতা বড়ুয়া জানিয়েছিলেন, ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তাঁর স্বামী। তারপর আর বাড়ি ফেরেন নি।

উত্তমের মা মাধু বড়ুয়া পরের বছর বলেছিলেন, তাঁর ছেলে জীবিত না মৃত, সে খবরও তাঁরা জানেন না।

আরও পড়ুন :   বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে রাত ৮টার পর দোকান-মার্কেট বন্ধ রাখার নির্দেশ।

তখন কক্সবাজারের তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আকতার বলেছিলেন, ‘এক বছরেমধ্যে নানাভাবে উত্তম বড়ুয়ার খোঁজ করা হয়েছে। কিন্তু কোনও খোঁজ মেলে নি।’

উত্তমের ব্যাপারে রীতা মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বলেন, ‘ওকে (উত্তম) তো পাওয়া ‍যায় নি। ওর তো খোঁজ-খবর নাই, কী বলবো আর।’

ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনিও বলেন, উত্তমের খোঁজ আর মেলে নি।

উত্তম থাইল্যান্ড কিংবা মিয়ানমারে পালিয়ে গেছেন বলে এলাকায় গুঞ্জন থাকলেও সেই তথ্য কেউ নিশ্চিত করতে পারেন নি।

ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদুল বলেন, ‘বিভিন্ন মানুষজন বলে সে নাকি আছে। আমি তো দেখি নি।’

ঘটনার পর রামু ও উখিয়াতে হামলার সময় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া৷ তিনি বলেন, ‘উত্তমের হদিস নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও কোনও অগ্রগতি নেই।’

কক্সবাজার, রামু ও উখিয়ার ঘটনায় যেসব মামলা হয়েছিলো, তারমধ্যে একটি মামলায় উত্তম বড়ুয়া প্রধান আসামি।

উত্তমের খোঁজ জানতে চাইলে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসাইন মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) জানান, মাত্র দুইমাস হয় তিনি এই থানায় যোগ দিয়েছেন। সহিংসতার নয় বছরপূর্তিতেই নানা আলোচনার খবরে তিনিও উত্তমের বিষয়টি জেনেছেন।

আরও পড়ুন :   নিউজিল্যান্ডে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা মিনহাজুলের।

‘একটি মামলায় সে (উত্তম) প্রধান আসামি হলেও তাঁর ব্যাপারে পুলিশের কাছে কোনও ধরনের তথ্য নেই,’ বলেন ওসি।

কেমন আছে উত্তমের পরিবার? : নয় বছর আগে উত্তম নিখোঁজ হওয়ার সময় তাঁর ছেলে আদিত্য বড়ুয়া ছিলো ৪ বছর বয়সি। এখন সে ক্লাস সেভেনে পড়ে। তাঁকে নিয়েই থাকেন রিতা।

খবর খোঁজ নিতে গেলে একইসঙ্গে অভিমান, রাগ, ক্ষোভের প্রকাশ ঘটান উত্তমের স্ত্রী।

আঞ্চলিক ভাষায় তিনি যা বলেন, তা হলো তাই, ‘এখন আর কিছু বলার নেই…১০ বছর ধরে নিউজ করছেন, কারও কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা কী পেয়েছি?’

‘আমরা যে যন্ত্রণা ভোগ করছি, তা ভুলে থাকতে চাই। আমাদেরকে আমাদের মতো করে থাকতে দিন। নিরাপত্তাও চাই না, এখন জীবন বাঁচানোই প্রধান বিষয়।’

রামুতে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বর্ষপূর্তি এলেই শুধু বিভিন্নজন খোঁজ-খবর নেয় বলে জানান রিতা।

‘২৯ সেপ্টেম্বর এলে সবাই ফোন করে। আমরা বেঁচে আছি না মরে গেছি? কে খবর নেয়। আমরা যে কষ্ট করে খাই-চলি, তা কোথাও লেখা হয় নি। এটা লেখেন, আমার বাচ্চা বড় করতে হবে।’

আরও পড়ুন :   প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরেছেন

নয় বছর ধরে একই যন্ত্রণাকে সঙ্গী করে দিন কাটাচ্ছেন রিতা; ভবিষ্যতেও তা উপশমের আশা দেখছেন না।

‘আমাদের নিয়ে মানুষ স্বার্থ আদায় করছে, আর কিছু নয়। আমরা হয়েছি ভুক্তভোগী। যন্ত্রণা ভোগ করছি আমি। আমরা কতো কষ্ট করে চলেছি, তা আর বলতে চাই না। এ যন্ত্রণায় ঘরেও থাকি না, বাইরে বাইরে দিন কাটাতে হয়।’

তবে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম দাবি করেন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যের মাধ্যমে উত্তমের পরিবারের খবর রাখেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘উত্তমের ফ্যামিলি তো ভালোই আছে, সুন্দর আছে। কারও কোনও সমস্যা হয় নি। কোনও সমস্যা রয়েছে কি না, খোঁজ নিই। কোনও সমস্যা নেই। সমস্যা থাকলে এলাকার মেম্বারের মাধ্যমে আমাকে জানাতো।’

ফরিদুল আরও জানান, তখন বৌদ্ধ ও মুসলমানদের ভেতরে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিলো, তা এখন আর তা নেই। এলাকায়ও কোনও সমস্যা নেই।

সাম্প্রদায়িক সেই সন্ত্রাসের পরের বছরই সরকারি উদ্যোগে সব বৌদ্ধ পল্লী, বসত ঘর নির্মাণের পাশাপাশি ধ্বংস হওয়া ১৯টি বৌদ্ধবিহার ও মন্দিরও তৈরি করে দেওয়া হয়।

ওই ঘটনায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জিএম রহিমুল্লাসহ দেড় হাজারের বেশি লোককে আসামি করে মামলা করেছিলো পুলিশ। ১৮টি মামলার অভিযোগপত্রে মোট ৯৩৬ জনকে আসামি করা হয়। তবে তারা সবাই এখন জামিনে মুক্ত।

About Author

Leave a Reply

Related Post

বঙ্গবন্ধুর সমা‌ধি‌তে বি‌জি‌বির নতুন মহাপ‌রিচাল‌কের শ্রদ্ধা।বঙ্গবন্ধুর সমা‌ধি‌তে বি‌জি‌বির নতুন মহাপ‌রিচাল‌কের শ্রদ্ধা।

0 Comments ">9:23 PM


ডন সংবাদদাতা, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জের টু‌ঙ্গিপাড়ায় জা‌তির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মু‌জিবুর রহমা‌নের সমা‌ধি‌তে শ্রদ্ধা জা‌নি‌য়ে‌ছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নবনিযুক্ত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ। শনিবার (৫ মার্চ) সকাল ১০টার

কেরানীগঞ্জ থেকে অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক গ্রেপ্তার।কেরানীগঞ্জ থেকে অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক গ্রেপ্তার।



ডন প্রতিবেদন : ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে অগ্নি দুর্ঘটনায় দগ্ধ অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখ ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। এক আত্মীয়ের বাসায় তিনি আত্মগোপনে ছিলেন বলে জানা গেছে। সোমবার

প্রিয় পাঠক, ভালো মানুষ এবং ভালো কাজের প্ল্যাটফর্ম আওয়ার ডনে আপনাকে স্বাগতম

X