ডন প্রতিবেদন : ‘অনলাইনে’ হিযবুত তাহরীরের জঙ্গিদের সংগঠিত হওয়ার চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে তারা অনলাইন সম্মেলনও ডেকেছে। আর এ সম্মেলনের তারিখ দেওয়া হয়েছে পবিত্র শবে বরাতের দিন অর্থাৎ আজ শুক্রবার (১৮ মার্চ)। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই দিনে অনলাইন সম্মেলন ডাকার মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষকে বোকা বানাতে চাইছে হিযবুত তাহরীর। যা তারা অতীতেও করে এসেছে। তবে কখনোই সফল হয় নি।
সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে দেশে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর এই জঙ্গি সংগঠন দেশে গোপনে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করে এলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নানামুখী তৎপরতায় তা সম্ভব হয়ে উঠে নি। তারপরও আরও গোপনীয়তা রক্ষা করে তারা তাদের কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছে। তবে নিষিদ্ধ ঘোষিত এ জঙ্গি সংগঠন মাঝেমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মানুষকে টাকা দিয়ে পোস্টার সাঁটাচ্ছে। আর এই পোস্টার সাঁটানোর মধ্যেই তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ। তবে এই পোস্টারই যাতে না সাঁটাতে পারে এবং সাঁটানো পোস্টার যাতে তুলে ফেলা হয়, সেক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাঁরা বলছেন, দেশের কয়েকটি বিদ্যাপিটে হিযবুত তাহরীর নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে পোস্টার সাঁটানোর চেষ্টা করে থাকে। তাদের এই পোস্টার মাঝেমধ্যে থাকে আবার মাঝেমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন কিংবা সচেতন নাগরিকেরা তুলে ফেলেন। সবমিলে তবুও এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জোর নজর দিতে হবে।
‘কোথাও পোস্টার দেখলেই নিজ উদ্যোগে তুলে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে কয়েকটি স্থানে এ ব্যাপারে টহল দিয়ে হলেও পোস্টার তুলে ফেলতে হবে। আর পোস্টার লাগানোর সময় হাতেনাতে ধরতে পারলে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
সূত্র জানায়, হিযবুত তাহরীর মাঝেমধ্যে অনলাইনে সম্মেলন ডাকে। তবে এসবক্ষেত্রে দেশের তথ্য-প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে থাকায়, জঙ্গিরা এক্ষেত্রে সুবিধা করতে পারছে না। এক্ষেত্রে বিভিন্ন মাজার (হয় দেশে বা প্রতিবেশি দেশে) বা মসজিদে বৈঠক করারও চেষ্টা থাকছে হিযবুত তাহরীরের। তবে সচেতন ইমামদের কারণে তাও অধিকাংশ সময় সম্ভব হয়ে উঠছে না। আবার এখন তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে সাধারণ মানুষও অনেক সচেতন। তাই বোমাবাজি বা মানুষ হত্যার মতো কাজ মানুষ আর সমর্থন না করায় প্রায় পুরোপুরি একঘরে হয়ে পড়েছে জঙ্গিরা।
সূত্র আরও জানায়, দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিজেদের দলে ভেড়াতে চেষ্টা করে থাকে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন। এক্ষেত্রে চেষ্টা করে থাকে হিযবুত তাহরীরও। আর এসব ক্ষেত্রে তাদের কাছে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়, এসব কাজ করতে আকার-ইঙ্গিতে নিরুৎসাহিত করা হয় ওই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে। পরে ওই ব্যক্তি তাদের এসব আকার ইঙ্গিতে নিরুৎসাহিত না হলে আবারও চেষ্টা করা হয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ‘দাওয়াত’ দেওয়ারও চেষ্টা করা হয়ে থাকে। তবে ওই ব্যক্তি এর কোনোকিছুই গ্রহণ না করলে, তার ক্ষতি করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে তাকে অন্য প্রসঙ্গ এনে হুমকিও দেওয়া হয়। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সচেতন হলে কিছুই করতে পারে না জঙ্গিরা এবং তারা নিরাশ হয়ে তখন অন্য ব্যক্তির ক্ষেত্রে এসবকিছু প্রয়োগ করা শুরু করে।
সূত্রমতে, দেশে কিছু সময় নাশকতারও চেষ্টা করে থাকে হিযবুত তাহরীর। তবে অধিকাংশক্ষেত্রেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় তারা সফল না হওয়ায় অন্য রাজনৈতিক দলে ঢুকেও এসব চেষ্টা করে থাকে। তবে এসবক্ষেত্রেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় তারা বিফল হওয়ায় এখন এক রকম মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে অনেকেই জঙ্গিবাদ ছেড়ে দিয়ে সাধারণ জীবন-যাপন শুরু করেছে বলেই জানিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
জানা গেছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের অনলাইন সম্মেলন কঠোরতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। এক্ষেত্রে অনলাইনে তাদের এ ধরনের সম্মেলনের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেই জানিয়েছেন তাঁরা।
সার্বিক ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার ফারুক হোসেন বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, বড় ধরনের নাশকতার সক্ষমতা অনেক আগেই হারিয়েছে হিযবুত তাহরীর। তাদের এখন ছোট নাশকতা করারও সক্ষমতা নেই বললেই চলে।
‘আর অনলাইনে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীরের সম্মেলনের ব্যাপারে আমরা বেশ কঠোর অবস্থানে রয়েছি। এসব ব্যাপারে যদি কোনোকিছু আমাদের চোখে পড়ে, তবে তাৎক্ষণিক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’