The Our Don Don Bangabandhu and Bangabandhu's family,Don Freedom Fight,Don Intelligence Agencies and Other Forces,Don Interview,Don Special ২৫ মার্চের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঘটনা স্মরণ করলেন বঙ্গবন্ধুর সহকর্মী।

২৫ মার্চের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঘটনা স্মরণ করলেন বঙ্গবন্ধুর সহকর্মী।




আনিসুর রহমান, বাসস : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন বয়স্ক সহকর্মী বলেছেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করার কয়েক ঘণ্টা আগে বাংলাদেশের স্থপতি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ওই কালোরাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা নিরস্ত্র বাঙালির ওপর দমনাভিযান শুরু করে।

৯৩ বছরের বয়োবৃদ্ধ হাজী গোলাম মোর্শেদ ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর ‘আজ থেকে আমরা স্বাধীন’ ঘোষণাটি স্মরণ করেন। ১৯৭১ সালের গোড়া থেকে কালোরাত পর্যন্ত সেই উত্তেজনাকর দিনগুলোতে তিনি বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। হাজী মোর্শেদ হিসেবে সুপরিচিত মোর্শেদ গত বছরের জুন মাসে ৯৩ বছর বয়সে মারা যান।

মৃত্যুর কয়েক মাস আগে বাসসের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুর রহমান ওই সময়কার ঘটনাগুলো ও ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঘটনবলির চাক্ষুস বিবরণ জানতে ঢাকায় তাঁর আসাদগেটের বাসভবনে গিয়েছিলেন।

তখন তিনি ওইদিনের ঘটনা সম্পর্কে জানাতে গিয়ে বলেন, ‘ভবিষ্যৎ জাতির পিতা পাকিস্তানিদের দমন অভিযান শুরুর আগেই বুঝতে পেরেছিলেন যে, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওইদিন বঙ্গবন্ধু দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বারংবারের অনুরোধ উপেক্ষা করে, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িতেই অবস্থান করেন।’

‘তিনি আশা করেছিলেন যে, তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারলে পাকিস্তানি সৈন্যরা নিরস্ত্র সাধারণ বাঙালিদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালাবে না। কিন্তু বাস্তবে তাঁর এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়। বঙ্গবন্ধু ইংরেজিতে বলেন, ‘তারা (পাকিস্তানি সৈন্য) আমাকে গ্রেপ্তার করতে আসছে। কিন্তু আমি এখানে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

আরও পড়ুন :   রাশিয়াকে আরও ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিচ্ছে ইরান : রয়টার্সের প্রতিবেদন

মোর্শেদ বলেন, কয়েক মিনিট পর সেনা কমান্ডোরা আসে, পরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এলিট ফোর্স স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপের (এসএসজি) সদস্যরা ওই বাড়িতে এসে গুলিবর্ষণ শুরু করে ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে।

তিনি জানান, রাত ১০টার দিকে বঙ্গবন্ধু একা তাঁর ঘরে বসে চোখ বন্ধ করে ওই ঘোষণাটি প্রদান করেন। সেনা হামলার আশঙ্কায় বেগম মুজিব ও তাঁদের ছোট সন্তান শেখ রাসেল এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যকে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো।

বঙ্গবন্ধুর সহকর্মী জানান, চরম যুদ্ধংদেহীভাবে সেনাবাহিনী ওই বাড়িতে হামলা চালানোর কিছু সময় আগে অপরিচিত এক ব্যক্তি ফোনে বঙ্গবন্ধুরসঙ্গে কথা বলতে চান।

‘ওই ব্যক্তি ফোনে শুধু এটুকু জানান যে, তিনি ‘বলধা গার্ডেন’ থেকে ফোন করেছেন এবং বঙ্গবন্ধুরসঙ্গে তাঁর কথা বলা খুবই জরুরি।’

‘স্বাধীনতার ঘোষণাটি সম্প্রচারিত হওয়ায় এখন করণীয় সম্পর্কে তিনি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা চান।’

মোর্শেদ বলেন, ‘তখন আমি বঙ্গবন্ধুর কাছে যাই এবং রিসিভারটি আমার হাতে রেখে ওই ব্যক্তির কথা বঙ্গবন্ধুকে বলি। তিনি ওই লোকটিকে লুকিয়ে যেতে এবং ট্রান্সমিটারটি ধ্বংস করে ফেলতে বলেন। আমি আজও ওই ব্যক্তির পরিচয় জানতে পারি নি।’

আসাদগেটের বাসভবনে আধশোয়া অবস্থায় ওই ঘটনাগুলো স্মরণ করছিলেন সাদা চুলের মোর্শেদ।

তিনি বলেন, ওইদিন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং আরও অনেকেরসঙ্গেই বঙ্গবন্ধু দেখা করেন। এমনকি সরকারি কর্মকর্তারাও আসেন তাঁর নির্দেশনা নিতে। যাঁরা এ সময়টাতে এক অশুভ লক্ষণ দেখতে পান।

আরও পড়ুন :   হাদিসুরের পরিবার পাচ্ছে ১ কোটি টাকা। চোখের জলে বিদায়।

‘কিন্তু ছাত্রনেতা তাবিবুর রহমান ছিলেন ওই সময়ে বঙ্গবন্ধুরসঙ্গে দেখা করা সর্বশেষ ব্যক্তি। অন্য অনেকের মতো তিনিও বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে তাঁকে আত্মগোপন করার অনুরোধ জানান।’

‘‘তিনি (তাবিবুর) বঙ্গবন্ধুকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘এই মুহূর্তে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যান, তারা (পাকিস্তানি সৈন্য) আপনাকে হত্যা করবে। জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘যদি তারা আমাকে না পায়, তবে তারা সাধারণ মানুষের উপর হত্যাযজ্ঞ চালাবে ও শহরটিকে ধ্বংস করে ফেলবে।’’

‘বঙ্গবন্ধুকে কিছুতেই বাড়ি ছাড়তে রাজি করাতে না পেরে অশ্রুসিক্ত চোখে তাবিবুর ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান।’

মোর্শেদ জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা এম এ আউয়ালের কথা স্মরণ করেন। যিনি ওই সময়ে প্যারা-পুলিশ আনসার ফোর্সের পরিচালক (জেনারেল) ছিলেন। ওইদিন তিনিও বঙ্গবন্ধুর দর্শনার্থীদের একজন ছিলেন।

নেতারা যখন বাড়ির ভেতর পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করছিলেন, তিনি তখন বঙ্গবন্ধুর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।

‘এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগ নেতা ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের কাছে আসন্ন সেনা অভিযান মোকাবিলার জন্য অস্ত্র কোথা থেকে পাওয়া যেতে পারে, তা জানতে চান। তখন আউয়াল পুলিশ অস্ত্রাগারে থাকা অস্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে বলেই মত দেন।’

মোর্শেদ জানালেন, ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খান প্রস্তাবটি বাতিল করে দেন। কিন্তু পরে বঙ্গবন্ধু সামরিক অভিযান ঠেকাতে পুলিশ সদস্যদের মাঝে অস্ত্র বিতরণ করতে বলে তাঁর পক্ষ থেকে আউয়ালকে মোর্শেদেরসঙ্গে ঢাকার তৎকালীন পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট ই এ চৌধুরির কাছে পাঠান।

আরও পড়ুন :   সীতাকুণ্ডের পর চট্টগ্রামের আরেক ডিপোতে ধোঁয়া : আতঙ্ক।

মোর্শেদ বলেন, রাত ১২টার পর, বঙ্গবন্ধু তাঁর কাছে এসে উজ্জ্বল আলোগুলো কোন দিক থেকে আসছে, তা জানতে ওপরতলায় চলে যান।

‘‘কয়েক মুহূর্ত পর, কেউ একজন চিৎকার করে বললো, ‘হ্যান্ডস আপ।’ অপর একজন বললো, ‘মাৎ মারো (হত্যা করো না)’।’’

‘এ সময় বঙ্গবন্ধু সিঁড়ির পাশে রাখা টেলিফোন সেটের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।’

‘এক সেকেন্ডেরমধ্যে কেউ একজন কিছু দিয়ে আমার মাথার পিছে আঘাত করলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’

মোর্শেদ আরও বলেন, তিনি ১৯৪৬ সালে আজাদ হিন্দ ক্যাপ্টেন রশিদ আলী দিবস থেকেই ‘মুজিব ভাইয়ের’ ভক্ত, যখন বঙ্গবন্ধু কোলকাতার একজন ছাত্রনেতা ছিলেন। পরের বছরগুলোতে ও ১৯৭১ সালের ঘটনাবহুল মার্চ মাসে তিনি বঙ্গবন্ধুর অন্যতম ঘনিষ্ঠ নির্ভরযোগ্য সঙ্গী হয়ে উঠেন। তিনি বঙ্গবন্ধুরসঙ্গে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত থাকতেন।

মোর্শেদ ১৯৪৯ সালে স্কুলে পড়াশুনা শেষ করে, যশোরের এম এম কলেজে ভর্তি হন।

সেখানে তিনি কলেজ ইউনিয়নের নেতা হয়ে ওঠেন এবং পরে জেলা মুসলিম ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন। পাশাপাশি ১৯৫৩ সালে তিনি জেলা বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। তখন তাঁর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়।

১৯৫৫ সাল থেকে ৬২ সাল পর্যন্ত তিনি যশোর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ব্যবসা উপলক্ষে ১৯৬৪ সালে ঢাকায় আসার পর বঙ্গবন্ধুরসঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠে।

About Author

Leave a Reply

Related Post

শুক্রবারের বিশেষ : গোমতীর বিস্তৃত চরজুড়ে সাদা হাসিশুক্রবারের বিশেষ : গোমতীর বিস্তৃত চরজুড়ে সাদা হাসি



ডন প্রতিবেদক, কুমিল্লা : করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে কুমিল্লার গোমতী চরের কৃষকরা। দীর্ঘ এক মাসের শ্রমে-ঘামে সবুজ হয়ে উঠে গোমতীর চর। সবুজ গাছের গোড়ায় মাটি ভেদ করে উঁকি

দেশে নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন পায় ৩৯ শতাংশ মানুষ।দেশে নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন পায় ৩৯ শতাংশ মানুষ।

0 Comments ">4:08 PM


ডন প্রতিবেদন : দেশের মাত্র ৫৯ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পায়। আর নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা আছে ৩৯ শতাংশ ক্ষেত্রে। সোমবার (৩০ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘এডিপি বরাদ্দে আঞ্চলিক বৈষম্য : এসডিজি

প্রিয় পাঠক, ভালো মানুষ এবং ভালো কাজের প্ল্যাটফর্ম আওয়ার ডনে আপনাকে স্বাগতম

X