ডন প্রতিবেদক, শাহীন আহমেদ, কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী বল্লোভের খাষ ও নুনখাওয়া ইউনিয়নে কর্মসৃজন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকৃত সুবিধাভোগীর নাম বাদ দিয়ে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের ভাই, ওয়ার্ড সদস্যের স্ত্রী, ছেলে ও ছেলের বউয়ের নাম। রাখা হয় নি হত দরিদ্রদের নাম।
জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে উপজেলার বল্লোভের খাষ ও নুনখাওয়া ইউনিয়নে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পে ৩ শ ৪৩ জন সুবিধাভোগীর নাম তালিকাভুক্ত করা হয়। এর প্রায় অর্ধশত ব্যক্তিই স্বচ্ছল ও জনপ্রতিনিধির আত্মীয়-স্বজন। এর মধ্যে নাম রয়েছে বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামের দুই ভাই হাবিবুল ও পল্লী চিকিৎসক মোহাম্মদ আলীর। আরও নাম রয়েছে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল কাদেরের ছেলে সাহাজুল, এনামুল হক, পুত্রবধূ তাহমিনা বেগম, আদুরি বেগম, ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মোকারুল ইসলাম এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা, ছোট ভাই দিনাজপুরের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাকারিয়া সরকার এবং ভাতিজা খোরশেদ আলমের। এঁদের কেউ কখনো কাজ না করলেও কাগজে-কলমে ৬০ দিনের কাজ দেখিয়ে জনপ্রতি ৪ শ টাকা হারে দিন মজুরির টাকা তোলা হয়েছে।
এ ছাড়া তালিকায় অন্তর্ভুক্ত অনেকেই ইউনিয়ন সচিব মাহাফুজার রহমানের ঘনিষ্টজন। তাঁদের মোবাইল সিমকার্ড তিনি নিজের কাছে রেখে সেই টাকা উত্তোলন করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হত দরিদ্র মোস্তফা বলেন, ‘চেয়ারম্যান মোক কছে মাটি কাটার কাজোত মোর নাম আছে। কিন্তু কোদাল-ডালি নিয়া কাজ করবার যায়া শুনোং নাম কাটি দিছে। ক্যা কাটিলো সেডা কয় নাই। পরে শোনং সেডিকোনা (তালিকায়) চেয়ারম্যানের ভাই, যাঁরা সরকারি চাকরি করে তাঁর বউ এর নাম। এলা বুজলোং হামার চায়া ওমরাই গরিব বেশি। ওমারাই থাক।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আনসার-ভিডিপির ইউনিয়ন কমান্ডার মোহাম্মদ আলী ভোলা বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘তালিকায় চেয়ারম্যানের ভাই, ভাতিজা, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বারের ছেলে ও পুত্রবধুর নামসহ ইউনিয়ন সচিবের ঘনিষ্টজনদের নাম রয়েছে। অথচ অনেক হত দরিদ্রদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে মানুষ ক্ষুব্ধ।’
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা তালিকায় দেবর ও নিজের নাম থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘মজুরি টাকা কে পায়, সে বিষয়ে আমি জানি না।’
জানতে চাইলে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আব্দুল কাদের বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘মেম্বারেরও তো খরচ আছে, বিভিন্ন স্থানে খরচ করতে হয়। তাই সেই খরচের জন্য এক-দুইটা নাম দেওয়া হয়েছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নুনখাওয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম তাঁর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, ‘এটা কোনও দুর্নীতি নয়। যাঁদের নাম আছে, তাঁরা সবাই পাওয়ার যোগ্য। যারা আমার সঙ্গে নির্বাচন করে হেরে গেছে, তারাই শত্রুতা করে এসব বদনাম ছড়াচ্ছে।’
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর আহমেদ মাছুম বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তালিকা প্রিন্ট করে ইউনিয়নের ডোর টু ডোর যাচাই করা হবে। তালিকায় কতোগুলো এমন অসঙ্গতি রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সত্যতা পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।