ডন সংবাদদাতা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিজয়নগরের মাটি ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বর্তমানে দেশি-বিদেশি অনেক ধরনের ফলেরই বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে এই উপজেলায়।
কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা জানান, প্রতি বছর এই উপজেলায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার ফল উৎপাদন হয়। উৎপাদিত দেশি ফলের মধ্যে রয়েছে লিচু, কাঁঠাল, আম, জাম, মালটা, কমলা ও লটকন। বিদেশি ফলের মধ্যে রয়েছে আপেল, আঙুর, ড্রাগন ইত্যাদি। চলতি বছর বিজয়নগর উপজেলায় ৪১৪ হেক্টর জমিতে লিচু, ৩১৫ হেক্টর জমিকে কাঁঠাল ও ৬৫ হেক্টর জমিতে মালটার চাষ করা হয়েছিলো।
বর্তমানে বিজয়নগর উপজেলার প্রায় ১৮ হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই লকটন বিক্রিও শুরু হয়েছে। প্রতি কেজি লটকন পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। চলতি বছর বিজয়নগরে প্রায় কোটি টাকার লটকন বিক্রি করার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় লটকনের চাষ নিয়ে চাষীদের মধ্যেও আগ্রহ বাড়ছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, লটকনের রয়েছে পুষ্টি ও ওষুধি গুণ। ভিটামিন ‘সি’তে ভরপুর এই ফল, যা প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখা যায়। ১০০ গ্রাম পাকা লটকনে আছে খাদ্যশক্তি ৯১ কিলোক্যালোরি।
এ ছাড়া আমিষ ১ দশমিক ৪২ গ্রাম, চর্বি শূন্য দশমিক ৪৫ গ্রাম, ভিটামিন-সি ৫৫ মিলিগ্রাম। লটকনের বৈজ্ঞানিক নাম ব্যাকারিয়া স্যাপাডিয়া। ইংরেজিতে লটকনকে বলা হয় বার্মিজ গ্রেপ। বাংলাদেশে লটকন এলাকাভেদে বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন হাড় ফাটা, ভুবি, কানাইজু, লটকা, লটকাউ, লোটকা ইত্যাদি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর বিজয়নগরে প্রায় ১০ কোটি টাকার বেশি কাঁঠাল, প্রায় ১৫ কোটি টাকার লিচু ও প্রায় ১৩ কোটি টাকার মালটা বিক্রি করা হয়েছে। চলতি বছর ১ কোটি টাকার লটকন বিক্রি করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে।
আরও জানা গেছে, বিজয়নগর উপজেলার ১৮ হেক্টর লটকন বাগানের মধ্যে প্রায় ১০ হেক্টর লটকনের বাগান রয়েছে উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নে।
পাহাড়পুর ইউনিয়নের বামুটিয়া গ্রামের লকটন চাষী তোফাজ্জল হোসেন বাঙলা কাগজ ও ডনকে জানান, তাঁর বাগানে মালটা, লটকন, কমলা, কয়েক জাতের আম, লিচু, পেঁপে, কাঁঠাল, ড্রাগন ও সৌদি আরবের খেজুর গাছ রয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি আম ‘মিয়াজাকি’ ধরে আছে তাঁর বাগানে। মিয়াজাকি আম বাংলাদেশে সূর্যডিম আম হিসেবে পরিচিত।
চাষী তোফাজ্জল হোসেন বলেন, লটকন চাষ খুব সহজ। অযত্ন অবহেলাতেও লটকন গাছ বেড়ে ওঠে। তবে লটকনের চারা লাগানোর সময় জায়গা বাছাই করতে হয় নিয়ম মেনে। পানি আটকায় না ও ছায়াযুক্ত এলাকা লটকনের জন্য উপযুক্ত।
উপজেলার সেজামুড়া গ্রামের লকটন চাষী আবদুল হাসিমের বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, চোখ জুড়ানো দৃশ্য। বেশ কয়েকটি গাছে গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লটকন ধরে আছে।
আবদুল হাসিম বলেন, আমার বাগানে ১ শটি লটকন গাছ আছে। এ পর্যন্ত ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার লটকন বিক্রি করেছি। পাইকাররা এসে লটকন নিয়ে যান। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি স্থানীয় বাজারের পাইকাররাও বাগানে আসেন লটকন কিনতে।
উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, মাটির গুণের কারণে বিজয়নগরে সব ধরনের ফলের ভালো ফলন হয়। গত কয়েক বছর ধরে চাষীরা সুমিষ্ট ফল লটকনের দিকে ঝুঁকছেন। এবারও লটকনের ভালো ফলন হয়েছে। পাহাড়পুর ইউনিয়নেই ১০ হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে কমপক্ষে ২ থেকে আড়াইশ লটকনের চারা লাগানো যায়। একেকটি পূর্ণাঙ্গ গাছে ৮০ থেকে ১ শ কেজি লটকন পাওয়া যায়। কম যত্ন করেও ভালো ফলন বিধায় আমরা চাষীদের লটকন চাষে আগ্রহ বাড়াতে কাজ করছি। প্রত্যেকের বাড়ির অন্য গাছের ছায়ায় একটি করে হলেও লটকনের চারা লাগানোর জন্য পরামর্শ দিচ্ছি।
উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাদিউল ইসলাম সৃজন বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ফলের জন্য উর্বর ভূমি বিজয়নগর উপজেলা। দেশি, বিদেশি সব জাতের ফলই এখানে বাণিজ্যিভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে সাধ্যমত সব ধরনের সহযোগিতা করা হয় চাষীদের।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মুন্সী তোফায়েল হোসেন বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, বিজয়নগর হচ্ছে ফলের স্বর্গরাজ্য। বিজয়নগরে নানা জাতের ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। আমরা চাষীদেরকে বিভিন্নভাবে পরামর্শ ও সহযোগিতা করি। বিজয়নগরে প্রতি বছর প্রায় ৫০ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের ফল বিক্রি করা হয়।