The Our Don Don Editorial ইংরেজি নতুন বছর খোলা স্থানে উদ্‌যাপনে এতো নিষেধাজ্ঞা কেনো?

ইংরেজি নতুন বছর খোলা স্থানে উদ্‌যাপনে এতো নিষেধাজ্ঞা কেনো?




কালাম আঝাদ’র কলাম : ইংরেজি বছর দিয়েই দুনিয়াটা চলছে এবং আমাদের হিসাব-নিকাশও। অথচ আমরা সব উদ্‌যাপন করতে পারলেও এই ইংরেজি নববর্ষ কেনো উদ্‌যাপন করতে পারছি না। আমরা বলছি, খোলা মাঠে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না এবং ঘরোয়া পরিবেশে করলেও এত্তো এত্তো বিধিনিষেধ। ‍কিন্তু তা কেনো? তাহলে কি আমরা গুজবকারীদের পক্ষ নিচ্ছি না? কারণ এক শ্রেণির মানুষ আছে, যারা কথা রটায় যে- ইংরেজি নতুন বছর খ্রিস্টানদের। আচ্ছা তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই, ইংরেজি বর্ষ খ্রিস্টানদের; তাহলে এই ইংরেজিটাও তো খ্রিস্টানদের; তাহলে আপনি ইংরেজি শিখছেন কেনো? আমি শত-সহস্র উদাহরণ দিতে পারবো যে, এটা হিন্দুদের, এটা খ্রিস্টানদের বলে আমরা কতোকিছু অনেক দেরিতে গ্রহণ করেছি বলে, আমাদের অনেক ভুল হয়ে গেছে এবং তার মাশুল এখন দিচ্ছি আমরা। অন্তত স্মার্ট যুগে চলতে গেলে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার বিকল্প নেই এবং আপনাকে আধুনিক হতেই হবে। না হয় আপনি সব দিক থেকেই পিছিয়ে থাকবেন। কারণ এসব ‘ন্যারো মাইন্ডেড’ বিষয়।

আরও পড়ুন :   আমরা সংবাদকর্মীরা ও স্বপ্নের পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন।

আবার আমরা এই আধুনিক যুগে বাস করেও যদি ভাবনা নিয়ে রাখি- সেকেলে, তবে তা বড়ই দুঃখজনক। আমরা আমাদের দেশকে অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে জাহির করে বড় গলায় উচ্চবাচ্য করি। যদিও এক্ষেত্রে আমরা আমাদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অনুষ্ঠানের আয়োজনকে সাম্প্রতিককালে স্বাগত জানাচ্ছি, কিন্তু এ স্বাগত জানানো যথেষ্ট নয়। বরং সব ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে আমাদেরকে উদার হতে হবে। এক্ষেত্রে অন্তত বাংলাদেশের মতো দেশে ইংরেজি নববর্ষ উদ্‌যাপনে এতো বিধিনিষেধ কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

আচ্ছা, আপনি বলতে পারেন, ইংরেজি নতুন বছর আগেরদিন থেকেই তো উদ্‌যাপন করা হয় এবং দুর্ঘটনার কথা বিবেচনায় এনে এতো বিধিনিষেধ দেওয়া হচ্ছে। তাহলে আপনি শুনুন, বাংলা তারিখ শুরু হয় সকাল ৬টা থেকে- তাই বর্ষবরণের উদ্‌যাপন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। আরবি মাস শুরু হয় এর আগের দিন সন্ধ্যা থেকে (কারণ এটি চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল এবং চাঁদ আগেরদিন সন্ধ্যায় উঠে)। তাই ঈদের আগেরদিন চাঁদ দেখেই আমরা বিভিন্ন শুভেচ্ছা বাণী প্রেরণ করা শুরু করে দিই। আর ইংরেজি দিন শুরু হয় রাত ১২টা থেকে; তাই আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় বছরের আগের দিনই আমরা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছি। যদিও বছরের শেষদিনকে বরণ করার রীতিই রয়েছে; তবুও আগেভাবেই বর্ষবরণের আয়োজন শুরু করায় দোষ কোথায়?

আরও পড়ুন :   কালাম আঝাদ’র কলাম : ধর্মঘটের ভয় না পেয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে সিদ্ধান্ত দিন।

আমি যদি বলি, আমরা তো বাংলা বছর শুরুর আগের দিন অর্থাৎ চৈত্র মাসের শেষদিন চৈত্র সংক্রান্তি উদ্‌যাপন করে থাকি; আর ঈদের আগের দিন থেকেই ঈদ উদ্‌যাপন করার কথা তো বললামই- তাহলে ইংরেজি বর্ষ শুরু হওয়ার আগের দিনই উদ্‌যাপন শুরু করলে দোষ কোথায়?

এবার আমরা আসি- বিধিনিষেধ নিয়ে। আচ্ছা, বাংলাদেশ হচ্ছে বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশ। তাহলে এখানে কেনো শুধু শুধু ইংরেজি বর্ষবরণে আমরা এতো নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছি? আর আমরা এসব নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কি বরং পশ্চিমা দেশগুলোর নজরে খারাপ হচ্ছি না? অথচ আমাদের পররাষ্ট্র নীতি তো ‘কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়; সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব’। তাহলেও কেনো আমরা এমন করছি?

আরও পড়ুন :   কালাম আঝাদ’র কলাম : বঙ্গমাতার জন্মদিনে শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা।

আর যদি বলি, আমাদের যে কোনও অনুষ্ঠান উদ্‌যাপনের ক্ষেত্রে কি আমরা বলি যে, এটি খোলা মাঠে করা যাবে না, এটি ইনডোরে করতে হবে? তাহলে কেনো শুধু শুধু ইংরেজি বর্ষবরণের ক্ষেত্রে বলবো?

তা ছাড়া ইংরেজি বর্ষবরণ কনসার্টের সঙ্গে সংযুক্ত। সুতরাং আমরা চরম অন্যায় করছি। এগুলো থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে, এখনই।

সর্বোপরি, আমি বলবো, আমরা আমাদের দিনযাপন করতে গেলেই যে তারিখটির প্রয়োজন পড়ে, আর সেই ইংরেজি বর্ষবরণ আমাদের রাষ্ট্রীয়ভাবেই করা উচিত। এক্ষেত্রে আমাদের তো কোনও আয়োজন থাকছেই না; বরং ব্যক্তিগতভাবে আয়োজন করতে গেলেও আমরা বিভিন্ন বিধিনিষেধ দিয়ে একটা যাচ্ছেতাই অবস্থা সৃষ্টি করে দিচ্ছি। যা চরম অন্যায়। সুতরাং ব্যক্তিগত, সামষ্টিক কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ইংরেজি নববর্ষের আয়োজনে পুলিশ সহায়তা করবে এবং আগামীতে রাষ্ট্রও দিনটি উদ্‌যাপন করবে- এটিই আমার কামনা।

সকল বস্তুর মঙ্গল হোক।

About Author

Leave a Reply

Related Post

সকলকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছাসকলকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা



কালাম আঝাদ’র কলাম : এ আমাদের দেশ। এ আমার সোনার বাঙলা। এ দেশ ৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে। এ দেশ ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে। বাংলাদেশ আজ ৫২ বছরে পা

কলাম : কন্যাদের জন্য বাঁচিকলাম : কন্যাদের জন্য বাঁচি



তানজিনা পৃথা : : বিক্রি হয়ে যাওয়া, পরিস্থিতির স্বীকার অথবা কিঞ্চিৎ ভালোবাসার মোহে মেয়েটি যখন বিছানায় যায় তার নাম হয় ‘বেশ্যা’; যা সমাজের নিচু শ্রেণী, অস্পৃশ্য, গালির উপকরণ। অথচ পুরুষত্বের

প্রিয় পাঠক, ভালো মানুষ এবং ভালো কাজের প্ল্যাটফর্ম আওয়ার ডনে আপনাকে স্বাগতম

X