The Our Don Don Book Fair কলাম : কতোটা রোমান্টিক আমাদের রাষ্ট্রপতি

কলাম : কতোটা রোমান্টিক আমাদের রাষ্ট্রপতি




শান্তনু চৌধুরী :: আমাদের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আড্ডাপ্রিয় মানুষ। তিনি যে কোনও অনুষ্ঠানে যান না কেনো, নির্ধারিত বক্তব্যের বাইরে নানা হাস্যরসাত্মক কথায় শ্রোতাদের মন ভরিয়ে দেন। এসব আলোচনায় বাদ যায় না তাঁদের পারিবারিক আলাপও। তাঁর ভাষায়, ‘আড্ডা দিয়ে, কথা দিয়ে যুক্তি দিয়ে আসর জমিয়ে রাখাটাই আমার কাছে বেশি প্রিয়।’

রঙ্গ-প্রিয় রাষ্ট্রপতির জীবন নিয়ে সবার কম বেশি আগ্রহ থাকাটাই স্বাভাবিক। এবার বইমেলায় তিনি উদার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে তুলে দিয়েছেন তার জীবনী। নাম,‘আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি’। সেখানে নিজের ছেলেবেলা থেকে শুরু করে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত তাঁর জীবনের পথচলা তুলে এনেছেন এই বইয়ে। অকপটে বলে গেছেন তাঁর রোমান্টিক জীবনের কথা।

গুরুদয়াল কলেজে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও সুন্দরী মেয়ে দেখলে চমকে উঠি না, ভাবান্তর হতো না এমনটি নয়। বইতে তিনি বলেছেন, ‘আমার হৃদয় দখল করে থাকা দু’জন ব্রজবালার কথা বলতেই হয়। এদের একজন শহরের খড়মপট্টির বড়ো ব্যবসায়ীর মেয়ে।’ মো. আবদুল হামিদ লেখায় মেয়েটির চোখের প্রশংসা করেছেন ‘চোখে তার প্রচণ্ড ভাবভাণ্ডার ছিল’, ‘তার দৃষ্টিতে এতোটাই মুগ্ধতা ছিল যে কঠিন দিল সহসাই তরল হয়ে যেত।’ শহরে গেলেই আবদুল হামিদ রাজনৈতিক উসিলায় মেয়েটির বাসায় যেতেন, কিন্তু আলাপ হতো রোমান্টিক চাপ্টার থেকে বেশি। পরে মেয়েটি ঘর সাজানোর স্বপ্ন দেখা শুরু করলে তিনি সেখানে যাতায়াত কমিয়ে দেন। কিন্তু কলেজে আকার-ইঙ্গিতে আবেদন-নিবেদন চলতো। সে সময় কলেজে পাশাপাশি বসে দুটো মনের কথা বলার পরিবেশ ছিল না। তাছাড়া আবদুল হামিদ ছিলেন কলেজের জিএস। এমনি করে সম্পর্কটা ঝুলে রইলো দীর্ঘদিন।

আরও পড়ুন :   বর্ণমালার বইমেলা : পর্ব-১৬

১৯৬৪ সালে আবদুল হামিদ বিয়ে করেন বর্তমান স্ত্রী রাশিদা খানম জ্যোৎস্নাকে। এরপর কী হলো? রাষ্ট্রপতির ভাষায়, ‘‘পরের বছর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় মেয়েটির পিতা সবাইকে নিয়ে ভারতে চলে যান। বিষয়টি শেষ হয়ে গিয়েছিল ভেবেছিলাম। কিন্তু না কয়েক বছর পরই ভারত থেকে একটি আকর্ষণীয় ছবিসহ নীল খামের পত্র পেলাম। প্রসঙ্গটা খানিকটা ছোট গল্পের মতো ‘শেষ হয়েও হইল না শেষ’। ছবিতে মেয়েটি বিয়ের সাজে, মাথায় টোপর, পাশে সুদর্শন এক যুবকের বরবেশে তার স্বামী। পাত্রের বয়ান ও বিয়ের ছবি দ্বারা আমাকে জানিয়ে দিতে চেয়েছে, সেও কোনো দিক থেকে কম নয়, নয় অক্ষম, ‘তুমি বিয়ে করতে পারো, আমি পারি না?’ ম্যাসেজটা এ ধরনের। পত্রও ছবি পেয়ে দীর্ঘদিন আমার স্মৃতির আকাশে ভালোবাসার বৈশাখী গর্জন ও বজ্রপাত হয়েছে।’’

আরও পড়ুন :   বইমেলা ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি। পরিস্থিতি সাপেক্ষে সময় বাড়তে পারে।

বইতে আবদুল হামিদ আরেকটি মেয়ের সঙ্গে রোমান্টিক সূচনার কথা লিখেছেন। যিনি ছিলেন তাঁর সহপাঠী। আচর্য পরিবারের মেয়ে। মেয়েটি এমন, ‘লম্বা একহারা গড়ন, টানাটানা চোখ, আজানুলম্বিত চুল। সে শাড়ি ব্লাউজ পরতো খুবই আঁটোসাঁটো ও পরিপাটি করে। ঠোঁটে লিপস্টিক এবং চোখে আইরিশ দিয়ে ধারালো করতো মুখ, অবয়ব ও দৃষ্টিকে।’

সংগঠনে অন্তভুক্তির উছিলায় আবদুল হামিদ তাদের বাসায় যেতেন। বেশ ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পর যাতায়াত আরো বেড়ে গেল। বইতে তিনি লিখছেন, ‘মনের আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। মেয়েটির ভাব ভঙ্গিতেও ভাবান্তর ভেসে উঠলো। কিছুদিন কেটে গেলো রঙিন প্রজাপতির মতো। ব্রাহ্মণের মেয়ে, বিষয়টি নিয়ে মহাসমুদ্রে সাঁতরাচ্ছে যেন। শেষ পর্যন্ত সীমান্তে পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলো সে। আমিও তথৈবচ। ঘরেতে এলো না সে যে, মনে তার নিত্য আসা যাওয়া, পরনে ঢাকায় শাড়ি, কপালে সিঁদুর।’

১৯৬৫ সালের যুদ্ধের ঝড়ের কারণে মেয়েটিও চলে যান ভারতে। থিতু হন পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুঁড়িতে। দৃষ্টি থেকে হারিয়ে গিয়ে ঠাঁই নেয় স্মৃতির গোপন অলিন্দে। সময় গড়িয়ে যায়। কিন্তু না! জাতীয় সংসদের স্পিকার থাকার সময় আবদুল হামিদ রবীন্দ্রনাথের সঞ্চয়িতা ও একটি চিঠি হাতে পান। সেখানে লেখা ছিল, ‘হামিদ ভাই ও রাশিদা আপাকে সুদূরিকার উপহার।’ সেখানে তার ফোন নাম্বারও ছিল। পরে আবদুল হামিদ এক অলস বিকেলে ফোন করেন জলপাইগুঁড়ি। অনেকক্ষণ আলাপের পর রঙিন যৌবনের পুষে রাখা স্বপ্নটার কথা বলে ফেললেন তিনি। অপর প্রান্ত থেকে কাননবালা উত্তর দিচ্ছে, ‘হামিদ ভাই, তোমার রসিকতা মাত্রা ছাড়াচ্ছে কিন্তু।’

আরও পড়ুন :   কবিতা : তব মাঝে : কালাম আঝাদ

‘আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি’ গ্রন্থের তথ্যমতে, বর্তমান স্ত্রী রাশিদা খানমকে তিনি বিয়ে করেছেন ভালোবেসে। আগের পরিচয়ের সূত্র ধরে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর রাশিদা খানমের সঙ্গে এদিক সেদিক হাঁটতে যেতেন। ‘অবশ্যই সম্ভ্রমের দূরত্ব বজায় রেখে। হাঁটতে যাওয়ার কারণ ছিল তখনকার সময়ে যুবক-যুবতী একত্রে বসে কথা বলার মতো পরিবেশ ছিল না। সমাজ এমন দৃশ্য কোনোভাবেই মেনে নিত না। সুতরাং হাঁটতে হাঁটতে কোথাও আত্মীয় পরিজনের বাড়ি যাচ্ছি এমন একটা মেসেজ দিয়ে চলতে হতো।’ পরে নানা বাধা পেরিয়ে তাকে বিয়ে করেন আবদুল হামিদ।

বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বইটিতে আরো উঠে এসেছে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের শৈশব, দুরন্তপনা, গ্রামীণ জীবন, রাজনীতি, ভ্রমণ, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্টতা ও মুক্তিযুদ্ধসহ নানা বিষয়। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বইটির মূল্য চারশত টাকা।

About Author

Leave a Reply

Related Post

বাংলা একাডেমি গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার ঘোষণাবাংলা একাডেমি গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার ঘোষণা



নিজস্ব প্রতিবেদন, ডন : ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৩’ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি পরিচালিত চারটি ‘গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার’ ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন গুণীজনের নামে পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থাপনা উপকমিটির আহ্বায়ক আমিনুর রহমানের শুক্রবার

প্রতিদিনের বইমেলা (তৃতীয় দিন) : সৌজন্যে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরপ্রতিদিনের বইমেলা (তৃতীয় দিন) : সৌজন্যে চ্যানেল টোয়েন্টিফোর



লিঙ্ক : https://www.youtube.com/watch?v=pzXiaXNG1fE আরও পড়ুন :   বই মেলায় ৩টি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করলেন শিক্ষামন্ত্রী। About Author admin See author's posts

প্রিয় পাঠক, ভালো মানুষ এবং ভালো কাজের প্ল্যাটফর্ম আওয়ার ডনে আপনাকে স্বাগতম

X