The Our Don Don Energy-Power and Mineral Resources বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশে আসছে আদানির প্রতিনিধি দল

বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশে আসছে আদানির প্রতিনিধি দল




নিজস্ব প্রতিবেদন, ডন : সর্বপ্রথম আশঙ্কা- আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ লাইনের অনুমোদন পাওয়া নিয়ে। তবে তার চেয়েও বড় প্রশ্ন- উচ্চমূল্যের এই বিদ্যুৎ কেনা বাংলাদেশের জন্য কি ঠিক হবে?

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাই আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি পর্যালোচনার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। মূল্য পর্যালোচনা, বিশেষ করে কয়লার যে দাম দেখানো হয়েছে, তা পর্যালোচনার জন্যই এই চিঠি। বাংলাদেশ যে দামে কয়লা পাচ্ছে, আদানি গ্রুপ তার চেয়ে দাম বেশি দেখিয়েছে।

পিডিবির চেয়ারম্যান মাহবুবুর রাহমান বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, আদানি গ্রুপের একটি টিম দামের বিষয়টি নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার জন্য শিগগিরই ঢাকায় আসবে। তাঁদের সঙ্গে এ নিয়ে বিস্তারিত কথা হবে। আরও যে সঙ্কট আছে, সেগুলো নিয়ে কথা হবে। আমরা যে চিঠি দিয়েছি, তা চুক্তি সংশোধনের নয়। কয়লার দাম সংশোধন নিয়ে আলাপ আলোচনার কথা বলা হয়েছে৷’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দুইপক্ষের মধ্যে আলাপ-আলোচনা যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে আমরা এখনো আশা করছি মার্চেই আমরা আদানির বিদ্যুৎ পাবো।’

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘মার্চের ২৬ তারিখ থেকে আদানির বিদ্যুৎ আসার কথা থাকলেও দু-একদিনের মধ্যে তাঁদের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। পিডিবির দেওয়া কয়লার মূল্য সংশোধনের চিঠি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা হবে। উভয়পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে দেশের স্বার্থের পরিপন্থি কোনও সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে না। তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপর স্থানীয় কৃষকরা মামলা করেছেন। এটা তাঁদের দেশের অ্যভন্তরীণ বিষয়। আমাদের বিদ্যুৎ আমদানিতে এর কোনও প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি না।’

আরও পড়ুন :   জ্বালানি ডিজেল রেখেই মনপুরা দ্বীপে হচ্ছে হাইব্রিড বিদ্যুৎকেন্দ্র!

কয়লার বাড়তি দাম ধরার বিষয়টি নিয়ে আগে কেনো প্রশ্ন তোলা হয় নি- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘চুক্তিটি যখন করা হয়েছিলো, সেই সময়কার বাজারদরের ভিত্তিতেই কয়লার দরও ধরা হয়েছিলো। এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। নিশ্চয়ই এটি পর্যালোচনা করা হবে৷’

বাংলাদেশ এখন কয়লা কিনছে ২৫০ ডলার করে। অথচ আদানি পাওয়ার ৪ শ ডলার করে কয়লার চুক্তি করেছে।

২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগ ও আদানি পাওয়ারের মধ্যে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি হয়। সেই চুক্তির ভিত্তিতে তাঁরা ভারতের ঝাড়খন্ডে এক হাজার ৬ শ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে। পশ্চিমবঙ্গের পাশেই ঝাড়খন্ডের ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়ার সঞ্চালন লাইন হয়ে বাংলাদেশে ওই বিদ্যুৎ আসার কথা।

চুক্তি অনুযায়ী, আদানি পাওয়ার ২৫ বছরের জন্য এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। প্রথম পর্যায়ে মার্চে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসার কথা ৷ তবে এখন পরীক্ষামূলকভাবে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে।

নানা সূত্র এবং গবেষণা বলছে, আদানির প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে ১৬ টাকা, যা ভারত সরকারের উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের চেয়ে অনেক বেশি। ভারত থেকে এখন বাংলাদেশ যে বিদ্যুৎ আমদানি করে, তার জন্য ইউনিট প্রতি সাত টাকার চেয়েও কম দিতে হয়।

আরও পড়ুন :   সৌদি আরবের কাছে তেল চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

এদিকে মঙ্গলবার আদানি পাওয়ারের কাজ বন্ধ ও অন্যান্য দাবিতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব ডেমোক্র্যাটিক রাইটস (এপিডিআর) নামে একটি সংস্থার পক্ষে ৩০ জন কৃষক এই মামলা করছেন। ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডা থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ১০৬ কিলোমিটার ও বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে জাতীয় গ্রিড পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের কমিশনিং সম্পন্ন হয়েছে।

কৃষকদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ না দিয়ে কৃষিজমিতে খুটি বসিয়ে লাইন নেওয়া হয়েছে।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘আসলে আদানির সঙ্গে পিডিবির কী চুক্তি হয়েছে, তা আমাদের জানা নেই। সেটা উন্মুক্ত করা দরকার। তাহলে আমরা বুঝতে পারবো, যে, সেখানে দেশের মানুষের স্বার্থবিরোধী কিছু আছে কি-না৷’

তিনি বলেন, ‘পিডিবি কয়লার দাম নিয়ে আপত্তি করছে। সেটা একটা বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশের বিদ্যুতের চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪৩ ভাগ অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি আছে। সেখানে ভারতের আদানির কাছ থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ আনার কোনও যুক্তি নেই। আর আদানিকে এখন ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে। সেটাও কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আসলে এই চুক্তি বাতিলের কোনও সুযোগ থাকলে বাতিল করা উচিত।’

তিনি আদানির ব্যবসার অবনতি সম্পর্কে বলেন, ‘আদানির এই বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্ভবত শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত নয়। সেটা না হলে এর ওপর তেমন প্রভাব পড়ার কথা নয়। প্রভাব পড়ছে শেয়ারবাজারে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। তবে মামলা বা আর্থিক কারণে তাঁরা যদি বিদ্যুৎ সরবারাহ করতে না পারে, তার দায় বাংলাদেশের হবে না।’

আরও পড়ুন :   সুখবর : কৈলাশটিলার-৭ নম্বর কূপ : দৈনিক মিলবে ২ কোটি ঘনফুট গ্যাস।

এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিষেশজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘আসলে শুধু বিদ্যুতের দাম নয়, আদানির সঙ্গে চুক্তির আরও অনেক বিষয় নিয়ে সন্দেহ ও বিতর্ক আছে। কিন্তু এই চুক্তিটি যেহেতু প্রকাশ করা হয় নি, তাই আমরা অনেক কিছু জানি না। ফলে সরকারের উচিত হবে চুক্তিটি প্রকাশ করে সেটা নিয়ে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে কী করা যায়, সেটার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া। কারণ, চুক্তি মানি না বললেই আদানির সঙ্গে পেরে ওঠা যাবে না।’

তাঁর কথা, ‘নাইকোর ব্যাপারে আমরা যেমন চুক্তি পর্যালোচনার পর হাইকোর্টে গিয়ে সমাধান এনেছি। চুক্তি বাতিল করা গেছে। এক্ষেত্রেও তাই করতে হবে।’

এদিকে ভারতের যোজনা কমিশনের সাবেক কর্মকর্তা ও বিদ্যুতের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অমিতাভ রায় বলেছেন, ‘আদানির প্রকল্প অনুযায়ী, ভারত থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ যাবে। সেই বিদ্যুতের ট্রান্সমিশন লাইন যাবে ঝাড়খন্ড ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে। ট্রান্সমিশন লাইনের জন্য জমি নিতে হবে। সেই জমি রাজ্য সরকার বা আদানি কারো কাছেই নেই, আছে কৃষকদের কাছে। ফলে জমি অধিগ্রহণ না হলে আদানির প্রকল্পও শুরু হবে না। ফলে প্রকল্প এখনই শুরু হওয়ার সম্ভবনা নেই।’

‘তা ছাড়া আদানি গোষ্ঠীর অবস্থা আরও খারাপ হলে, তাঁরা এই প্রকল্পে বেশি অর্থ বিনিয়োগ করার মতো অবস্থায় থাকবে না। ফলে এই প্রকল্প নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থাকছে৷।’

About Author

Leave a Reply

Related Post

বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা সোমবারবিদ্যুতের পাইকারি মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা সোমবার



নিজস্ব প্রতিবেদন, ডন ও বাঙলার কাগজ : বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ছে। সোমবার (২১ নভেম্বর) এ সংক্রান্ত ঘোষণা দিতে যাচ্ছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। পাইকারি দাম বৃদ্ধির পর গ্রাহক পর্যায়ে দাম

সিপিডি : বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও দেশে বাড়ানো হয়েছে।সিপিডি : বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও দেশে বাড়ানো হয়েছে।



ডন প্রতিবেদন : সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সারা বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম কমছে, অথচ

প্রিয় পাঠক, ভালো মানুষ এবং ভালো কাজের প্ল্যাটফর্ম আওয়ার ডনে আপনাকে স্বাগতম

X