ডন সংবাদদাতা, শাহীন আহমেদ, কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রাম জেলার ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার চরগুলো এখন সবুজের সমারোহ। চরের বাসিন্দারা ‘সনাতনী ফসল’ আবাদের পাশাপাশি এখন বাড়তি আয়ের জন্য আবাদ করছেন অর্থকরী ফসল ভুট্টা।
আগাম জাতের এসব ভুট্টা চাষে পোকার আক্রমণ এবং রোগবালাই কম থাকায় চরের কৃষকেরা সাচ্ছন্দেই চাষ করতে পারছেন পণ্যটি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের অধিকাংশ চরগুলোর ধু ধু বালুচরের বুক চিরে সবুজ প্রকৃতিকে নবরূপ দান করেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কুড়িগ্রাম জেলার ৯ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আগাম ১২ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
চরাঞ্চলের কৃষকেরা জানিয়েছেন, স্বল্প শ্রম ও কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে তাঁদের।
‘প্রতি শতক জমিতে প্রায় ২ মণ করে ভুট্টা উৎপাদিত হয়। এতে উৎপাদন খরচের চেয়ে দ্বিগুণ লাভ হয়।’
‘এ ছাড়া ভুট্টার কাণ্ড জ্বালানি এবং পাতা গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। পাশাপাশি ভুট্টা আটা, মৎস্য খাদ্য ও মুরগীর খাবারসহ নানান উপকরণে ব্যবহৃত হচ্ছে।’
জেলার উলিপুরের সাহেবের আলগার নামাজের চরের কৃষক সামসুল মিয়া বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘আমরা এবারই প্রথম এই চরে ভুট্টার আবাদ করতেছি। এতোদিন মসলা ও বাদাম আবাদ করতাম। আশাকরি, ফলন ভালো হবে। আমরা লাভবান হবো।’
রৌমারী উপজেলার চর গয়টাপাড়া গ্রামের ভুট্টা চাষী মুকুল মিয়া ও বাগুয়ার চর গ্রামের আব্দুল জলিল বাঙলা কাগজ ও ডনকে জানান, বন্যার পানিরসঙ্গে জমিতে বালু আসায় ইরি ও বোর চাষ সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এসব জমিতে ভুট্টা চাষ করা হচ্ছে।
‘অন্য ফসলের চেয়ে ভুট্টা চাষে জমিতে সার বেশি লাগে। কিন্তু অন্যান্য ফসল এবং ইরি ও বোর ধান চাষের চেয়ে ভুট্টার আবাদে অনেক বেশি লাভ হয়।’
ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধনিরামের ভূট্টা চাষি নির্মল চন্দ্র রায় বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘ভুট্টা চাষে খরচ কম এবং লাভ বেশি- এ কারণে আমরা ভুট্টা চাষ করে আসছি।’
‘এবার ৫ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে।’
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রশীদ বাঙলা কাগজ ও ডনকে বলেন, ভুট্টা চাষে প্রতি বিঘায় খরচ হয় ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা। এবং বিঘাপ্রতি ফলন হয় ৩৩ থেকে ৩৪ মণ পর্যন্ত।
‘প্রতি বিঘা জমির ভুট্টা বিক্রি হয় ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকায়। খরচ বাদে লাভ হয় ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা পর্যন্ত।’
‘এ বছর কুড়িগ্রাম জেলায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আগাম ১২ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রণোদনা সহায়তা হিসাবে ভুট্টা কৃষকদের ২ কেজি করে বীজ, ১০ কেজি করে এমওপি (মিওরেট অব পটাশ) ও ২০ কেজি করে ডিএপি (ডায়ামোনিয়াম ফসফেট) সার বিনামুল্যে দিয়েছি।’
‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে, এ বার ভুট্টার ভালো ফলন হবে বলেই আশা করছি।’