নিজস্ব প্রতিবেদক, ডন ও বাঙলার কাগজ; খাগড়াছড়ি : বান্দরবানের আলীকদমে কলা চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে পাহাড়ে বসবাসরত পরিবারগুলো। দুর্গম পাহাড়ি পথ পেরিয়ে প্রত্যন্ত জনপদের বিপুল পরিমাণ কলা বিক্রির উদ্দেশ্যে শহরে নিয়ে আসেন স্থানীয় ক্ষুদ্র পাইকারেরা।
তাঁদের উৎপাদিত কলা যাচ্ছে দেশের নানান প্রান্তে। এতে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আসছে পাহাড়ে। সব মৌসুমেই পাহাড়ে কলা উৎপাদিত হয়। তবে বর্ষা মৌসুমে এর উৎপাদন বেড়ে যায় বলেই জানিয়েছেন চাষীরা।
পাহাড়ে অধ্যুষিত প্রায় ৯ শ বর্গকিলোমিটার আয়তনের উপজেলা আলীকদম। এর বিশাল অংশের পাহাড়জুড়ে কলাবাগান তৈরি করেছেন চাষীরা।
তাঁরা জানিয়েছেন, সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হলে কলা চাষ আরও বেশি সম্প্রসারিত হবে।
ব্যবসায়ীরা জানান, আলীকদমে সপ্তাহের শনিবার পানবাজার রোববার মাতামুহুরি নদীঘাট রেপারপাড়া এবং সোমবার আলীকদম বাজারে কলা কেনাবেচার হাট বসে। এসব বাজার থেকে স্থানীয় পাইকারদের হাত ধরে পাহাড়ি কলা ট্রাকে ও পিকআপে চকরিয়া কক্সবাজার কুমিল্লা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বড় শহরে নিয়ে যান বড় পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
শুধু মাতামুহুরী ঘাট থেকে সপ্তাহের হাটবারে ১০ থেকে ১২ হাজার ছড়া কলা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।
এদিকে আবহাওয়া ও মাটির উর্বরতার কারণে পাহাড়ে কলা চাষের উপযোগিতা ক্রমেই বাড়ছে। পাহাড়ের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখলেও কলা চাষীরা বরাবরই উপেক্ষিত। এখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দেশি কলার চাষ বাড়লেও বাড়ে নি কলা চাষের সুযোগ-সুবিধা। দুর্গম যোগাযোগের কারণে সঠিক সময়ে বাজারজাতকরণের অভাবে উপযুক্ত দাম মেলে না।
উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নে পোয়ামুহুরি এলাকায় গিয়ে কথা হয় কলা চাষী নুসুর সঙ্গে। তিনি এবার ৮ একর জমিতে কলা চাষ করেছেন। তিনি বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, চাহিদা বাড়ায় জুম খেতে জুম, ধান, ভুট্টার সঙ্গে সমন্বিত ফসল হিসেবে কলা চাষ হচ্ছে। সপ্তাহে তিনি ১৫০ থেকে ২ শটি কলার ছড়া কাটেন। প্রকারভেদে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করেন এই ছড়া। এ এলাকায় কলা আবাদে কীটনাশক ব্যবহার হয় না বললেই
চলে।
এলাকার একাধিক কলা চাষী বাঙলার কাগজ ও ডনকে জানান, পাহাড়ে মাটিভেদে বিভিন্ন জাতের কলার আবাদ হয়। এরমধ্যে দুই জাতের কলার আবাদ বেশি হতে দেখা যায়। একটি দেশি জাতের বাংলা কলা, অন্যটি চম্পা কলা।
এ ছাড়া চাপা সরবি ও সাগর কলার আবাদ হয় এখানে। সারা বছর এসব কলার ফলন পাওয়া গেলেও আগস্ট থেকে অক্টোবর মাসে ফলন মেলে সবচেয়ে বেশি।
চকরিয়া থেকে আসা ব্যবসায়ী মো. নজরুল বাঙলার কাগজ ও ডনকে জানান, সারা বছরই মাতামুহুরি নদীর ঘাট থেকে চকরিয়া ও কক্সবাজারের আশেপাশের জেলায় কলা নিয়ে যান।
বাহাদুর মিয়া বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, করোনায় কলা ব্যবসায় ধস নামলেও এখন তা অনেকটা কেটে গেছে। স্থানীয় বাজারে প্রতি বছর ১ শ পিস কলা প্রকার ভেদে ৩ শ থেকে ৪ শ টাকায় কিনেছি। সমতলের জেলায় দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিক্রি হয়।
চট্টগ্রাম থেকে আসা ব্যবসায়ী গফুর মিয়া (৪৫) বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, সমতল এলাকার কলা আর পাহাড়ের কলার মধ্যে অনেক পার্থক্য। এখানকার কলা আকারে সমতলের কলার চেয়ে অনেক হৃষ্টপুষ্ট। তাই এখানকার কলা নিয়ে বাজারে বসে থাকতে হয় না। এগুলো সমতলের ক্রেতারা লুফে নেয়।
ইয়াকুপ নামের এক ব্যবসায়ী বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, পাহাড়ের মাটিতে প্রাকৃতিকভাবেই কলাগাছ বেড়ে ওঠে। শুধু চারার আশপাশে জঙ্গল পরিষ্কারসহ মরা পাতা ও অতিরিক্ত চারা কেটে ফেলে দিলেই হয়। সার কীটনাশক ছাড়া চাষের কারণ এ কলার পুষ্টি অটুট থাকে। এর চাহিদাও বেশি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পিযুষ রায় বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, পাহাড়ে যেখানে-সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কলা চাষ হচ্ছে। উপজেলার মোট ৮৮ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমির মধ্যে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে কলা চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে কাঠালী কলা (বাংলা কলা), বীজ কলা, চম্পা কলা উল্লেখযোগ্য। কলাগুলোতে কোনও প্রকার কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না বলে স্বাদে ভরপুর হয়।
কলা চাষে কোনও প্রণোদনা দেওয়া হয় কী-না, জানতে চাইলে তিনি বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, সরকারে পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনও চাষীকে বিশেষ কোনও প্রণোদনা দেওয়া হয় নি। কলা চাষের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।