The Our Don Don Literature লিট ফেস্টে নোবেলজয়ী গুরনাহসহ খ্যাতিমান সাহিত্যিকদের সম্মিলন

লিট ফেস্টে নোবেলজয়ী গুরনাহসহ খ্যাতিমান সাহিত্যিকদের সম্মিলন




নিজস্ব প্রতিবেদন, ডন : কুয়াশাঢাকা শীতের সকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠেছিলো বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা সাহিত্যিক, শিল্পী, বিজ্ঞানী, গবেষক, নির্মাতা, প্রকাশকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সৃজনশীল গুণী ও গুণগ্রাহীদের সমাগমে। যাত্রা শুরু হলো ‘দশম ঢাকা লিট ফেস্টের’। চার দিনের এ আয়োজন চলবে ৮ জানুয়ারি রোববার পর্যন্ত।

বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নোবেলজয়ী সাহিত্যিক তাঞ্জানিয়ার আবদুলরাজাক গুরনাহ, ভারতের সাহিত্যিক অমিতাভ ঘোষ, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূ্রুল হুদা ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে লিট ফেস্টের উদ্বোধন করেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন লিট ফেস্টের তিন পরিচালক সাদাফ সায্, কাজী আনিস আহমেদ ও আহসান আকবর।

এর আগে সকাল দশটায় বর্ধমান হাউসের সামনের মঞ্চে বৌদ্ধ আধ্যাত্মিক সংগীত পরিবেশনা দিয়ে ফেস্টের কার্যক্রমের সূচনা হয়েছিল। আয়োজকেরা জানান, চার দিনের এবারের আসরে ১৭৫টির বেশি অধিবেশনে পাঁচ মহাদেশের পাঁচ শতাধিক বক্তা, সাহিত্যিক, লেখক, শিল্পী ও চিন্তাবিদ অংশ নিচ্ছেন। এবারই প্রথম লিট ফেস্টে প্রবেশের জন্য ২ শ ও ৫ শ টাকার টিকিট চালু করা হয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয় মণিপুরি নৃত্য পরিবেশনা দিয়ে। রাধাকৃষ্ণের প্রণয়ের ওপর ভিত্তি করে এবং রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে কয়েকটি একক ও সম্মিলিত নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা। এরপর ছিল উদ্বোধনী আলোচনা পর্ব।

আরও পড়ুন :   শুভ জন্মদিন সব্যসাচী সৈয়দ শামসুল হক

উদ্বোধনী বক্তব্যে ২০২১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারজয়ী তাঞ্জানিয়ার ঔপন্যাসিক আবদুলরাজাক গুরনাহ বলেন, ঢাকায় তিনি এই প্রথমবারের মতো এলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে পরিবেশিত মণিপুরি নৃত্য তাঁর কাছে খুব আকর্ষণীয় লেগেছে। বিশেষ করে শিল্পীদের বর্ণাঢ্য পোশাক ও অলংকার ছিল চমৎকার। তিনি বলেন, ‘আশা করি উৎসবের দিনগুলোতে এমন অনেক আকর্ষণীয় কিছু দেখব, যা আগে দেখি নি।’

অমিতাভ ঘোষ তাঁকে আমন্ত্রণের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ পারিবারিক যোগসূত্র রয়েছে। তাঁর মায়ের বাড়ি ফরিদপুরের গোপালগঞ্জে এবং বাবার বাড়ি ছিল বিক্রমপুরে। তাঁর ঠাকুরমা (দাদি) সব সময় ফরিদপুরের আঞ্চলিক বাংলায় কথা বলতেন। তিনি সব সময় বাংলাদেশ নিয়ে ভাবেন এবং বাংলা ভাষা তাঁর জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। তাঁর লেখায় বারবার বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।

অমিতাভ ঘোষ এ প্রসঙ্গে বলেন, তিনি ইতালিতে অভিবাসীদের ক্যাম্পে গিয়েছিলেন। সেখানে অনেক বাঙালি ও পাকিস্তানির দেখা পেয়েছেন, যাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন। তাঁদের কষ্টকর জীবনের গল্পগুলো খুব মর্মস্পর্শী।

আরও পড়ুন :   বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণা

সাম্প্রতিক বাংলাদেশের অবস্থা সম্পর্কে অমিতাভ ঘোষ বলেন, বাংলাদেশ এখন আঞ্চলিক নেতৃত্ব, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে। জিডিপির উন্নতি হয়েছে, সামাজিক নানা সূচকে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। এসব বাংলাদেশের অগ্রগতির পরিচয় তুলে ধরেছে। তিনি বাংলায় ‘সবাইকে ধন্যবাদ’ বলে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এ উৎসবের সঙ্গে আগেও নানাভাবে সহযোগিতা করেছে। এখন সংযোগ কিছুটা কমেছে। তবে ভবিষ্যতে লিট ফেস্টের সঙ্গে আবার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ তৈরি হবে বলে আশা প্রকাশ করে উৎসবের সাফল্য কামনা করেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ উৎসব সাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গনে দ্যুতি ছড়াবে।

এর আগে স্বাগত ভাষণে ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক সাদাফ সায্ বলেন, ‘হে ফেস্টিভ্যাল’ নামে ২০১১ সালে এই উৎসবের সূচনা হয়ে ছিল। ২০১৫ সালে এর নামকরণ করা হয় ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’। করোনা মহামারির কারণে গত তিন বছর এ উৎসব হয় নি। এবার নতুন আঙ্গিকে অনেক বৈচিত্র্যময় আয়োজন করা হয়েছে। এতে সাহিত্য আলোচনার পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা, শিল্পী ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, সংগীত, নৃত্য ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, শিশু ও তরুণদের জন্য আড্ডাসহ অনেক আকর্ষণীয় বিষয় যুক্ত হয়েছে এবারের উৎসবে।

আরও পড়ুন :   আমির হামজার স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিল।

সাদাফ সায্ বলেন, ‘করোনা মহামারি আমাদের বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে আমরা আবার পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হব। পরস্পরের অভিজ্ঞতা ও ভাব বিনিময় করব। এ অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের সমস্যা মোকাবিলায় সহায়ক হবে।’

লিট ফেস্টের পরিচালক আহসান আকবর বলেন, ‘উৎসবের দিনগুলোতে আমরা পরস্পরের সঙ্গে মতবিনিময় করে অনেক কিছুই শিখতে পারব। বিজ্ঞান, যোগাযোগ, প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। তা থেকে ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে আমরা দিকনির্দেশনা পেতে পারি।’

ঢাকা লিট ফেস্টের অপর পরিচালক কাজী আনিস আহমেদ বক্তব্যের শুরুতেই করোনাকালে যাঁরা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন, তাঁদের স্মরণ করেন। তিনি বলেন, লেখকেরা নিভৃতে কাজ করেন। বিজ্ঞানীরাও তাই। তাঁদের কাজ যখন জনসমক্ষে আসে, তখন সে সম্পর্কে সাধারণ মানুষ জানতে পারেন। উপকৃত হন। এখানে এই সৃজনশীল, চিন্তাশীল মানুষেরা তাঁদের ভাবনা ও সৃষ্টির বিষয়ে অনেক কিছুই তুলে ধরবেন, যা আমাদের আলোকিত করবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অপরাজিতা মুস্তাফা।

About Author

Leave a Reply

Related Post

বিজয় দিবসে কালাম আঝাদ’র ৩টি কবিতাবিজয় দিবসে কালাম আঝাদ’র ৩টি কবিতা



অস্ফুট স্বর আর তীব্র আকাঙক্ষা যার মেলবন্ধনের বৈপরীত্য না সওয়া, সয়ে যাওয়ার তৈরি রীতি পা দলে এগিয়ে যাওয়া সুখপ্রীতি সকল বাধা ছিন্ন করে নেওয়া জয় জীবনমুখী সর্বকাজের সুখজয় জয় বাঙলা,

বইমেলা ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি। পরিস্থিতি সাপেক্ষে সময় বাড়তে পারে।বইমেলা ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি। পরিস্থিতি সাপেক্ষে সময় বাড়তে পারে।



ডন প্রতিবেদন : অমর একুশে বইমেলা ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে। বইমেলা চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি সাপেক্ষে পরবর্তীকালে বইমেলার সময় বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। বইমেলা

প্রিয় পাঠক, ভালো মানুষ এবং ভালো কাজের প্ল্যাটফর্ম আওয়ার ডনে আপনাকে স্বাগতম

X