The Our Don Don People are for People কনকনে শীতে গৃহহীন রোহিঙ্গাদের অমানবিক জীবন

কনকনে শীতে গৃহহীন রোহিঙ্গাদের অমানবিক জীবন




নিজস্ব প্রতিবেদক, ডন; কক্সবাজার : বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তে দুইদিন ধরে গোলাগুলি বন্ধ আছে। এতে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও বাসিন্দারা এখনো আতঙ্কে আছেন। শূন্যরেখার আশ্রয় অঞ্চল ছেড়ে পালিয়ে আসা প্রায় তিন হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছে শূন্যরেখা থেকে ৭০০ গজ দূরে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠসহ আশপাশের পাহাড়–জঙ্গলে। কনকনে শীতে ত্রিপলের ছাউনির নিচে সীমাহীন কষ্টে দিন পার করছে তাঁরা।

শনিবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে গৃহহীন রোহিঙ্গা পরিবারে শুকনা খাবার সরবরাহ করেছে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি)। কিন্তু চার দিন ধরে এসব রোহিঙ্গার বেশিরভাগ রান্না করা খাবার খেতে পারেনি। ক্ষুধার কষ্ট, শীতের কষ্ট ছাড়াও গোসল ও টয়লেটের ব্যবহার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন নারী ও শিশুরা। এজন্য কেউ কেউ ওই মাঠ থেকে চোরাইপথে উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয় অঞ্চল এবং ঘুমধুমের বিভিন্ন পাহাড়-জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যাচ্ছে। তাতে এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় (বাংলাদেশি) অধিবাসীরা।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, গতকাল (শনিবার) শূন্যরেখার আশ্রয় অঞ্চল থেকে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের শুকনা খাবার দিয়েছে আইসিআরসি। সাড়ে পাঁচ বছর ধরে শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের ত্রাণ ও স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। শূন্যরেখার আশ্রয় অঞ্চল থেকে কতজন রোহিঙ্গা বাংলাদেশ ভূখণ্ডে আশ্রয় নিয়েছে, তা গণনার কাজ চলছে।

পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, গত বুধবার সকালে তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা আশ্রয় অঞ্চলে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘আরাকান স্যালভেশন আর্মির’ (আরসা) সঙ্গে মিয়ানমারের আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের’ (আরএসও) মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। গুলিতে এক রোহিঙ্গা নিহত ও দুই শিশু আহত হয়। এ ঘটনার পর শূন্যরেখার আশ্রয় অঞ্চলে ৬৩০টির বেশি ঘর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন :   সেই সাদিয়ার চিকিৎসা করাবে বসুন্ধরা গ্রুপ

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের মুখে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা শূন্যরেখার এই আশ্রয় অঞ্চলে পালিয়ে এসে অবস্থান নেয়। ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ওই আশ্রয় অঞ্চলে ছিলো ৬২১টি পরিবারের ৪ হাজার ৩০০ রোহিঙ্গা। ১৮ জানুয়ারি গোলাগুলি ও অগ্নিসংযোগের পর গৃহহীন পরিবারগুলো তুমব্রু সীমান্তের কোনাপাড়া খাল অতিক্রম করে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়। কিছু রোহিঙ্গা পরিবার অন্যত্র পালিয়ে গেছে। বর্তমানে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আশপাশের কয়েকটি জঙ্গল এলাকায় অবস্থান করছে প্রায় ২ হাজার ৯০০ রোহিঙ্গা।

সাড়ে পাঁচ বছর আগে অর্থাৎ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর রাখাইন রাজ্য থেকে নাফ নদী অতিক্রম করে কক্সবাজারে পালিয়ে আশ্রয় নেয় প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে আসে আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয় অঞ্চলে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ।

রোববার (২২ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের পশ্চিম কোনায় ত্রিপলের ছাউনির নিচে ১০-১৫ জন রোহিঙ্গা বসে ছিলেন। খোলা মাঠে গ্যাস সিলিন্ডারে চলছিল ভাত রান্নার কাজ। সেখানে কয়েকটি শিশু ভাতের জন্য কান্নাকাটি করছিল। শিশুদের গায়ে শীত নিবারণের কাপড়চোপড় ছিলো না।

আরও পড়ুন :   প্রধানমন্ত্রী : বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে কেউ ঠিকানাবিহীন থাকবে না।

আবদুল গনী (৫৫) নামের এক রোহিঙ্গা বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, ১৮ জানুয়ারি সকালে আরসার সন্ত্রাসীরা হঠাৎ আরএসও সদস্যদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। আরএসও সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছোড়ে। তাতে কয়েকজন হতাহত হয়। একপর্যায়ে কে বা কারা শূন্যরেখার আশ্রয় অঞ্চলের পাঁচ-ছয়টি স্থানে একসঙ্গে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘণ্টাখানেক সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গার ৬৩০টির মতো ঘর পুড়ে শেষ হয়। গৃহহীন কয়েক শ রোহিঙ্গা প্রথমে মিয়ানমারের জঙ্গলে আশ্রয় নিলেও পরে তাদের পিটিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এখন শূন্যরেখার ২ হাজার ৯০০ রোহিঙ্গা তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠসহ আশপাশে অবস্থান করছে।

সফুরা বেগম (৪৫) নামের আরেক রোহিঙ্গা নারী বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, ‘শূন্যরেখার আশ্রয় অঞ্চলে আগুনে শীতের কাপড়চোপড়, রান্নাবান্নার আসবাবসহ মূল্যবান জিনিসপত্র পুড়ে গেছে। এখানে (তুমব্রুতে) এক কাপড়ে চার দিন কাটিয়ে দিচ্ছি। গোসল, পায়খানার কোনো ল্যাট্রিন নেই। রাতের বেলায় পাহাড়-জঙ্গলে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে মেয়েদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’

দেখা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন খালি জায়গায় কম্বল, পলিথিন ও বাঁশের ঝুপড়ি তৈরি করে অবস্থান করছে কয়েক শ রোহিঙ্গা পরিবার।

তুমব্রু এলাকার গ্রাম পুলিশ আবদুল জাব্বার বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, সীমান্তে গোলাগুলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না। শূন্যরেখায় এখন আর কোনো ঘরবাড়ি নেই, সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন :   ঈদ উপহার : প্রায় ৩৩ হাজার পরিবারের একটি ঘর পাওয়ার স্বপ্ন পূরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলম বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, শনিবার থেকে রোববার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় কিংবা আশপাশের এলাকায় মিয়ানমারের সশস্ত্র দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। তাতে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক মনে হলেও স্থানীয় অধিবাসীদের আতঙ্ক যাচ্ছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জনপ্রতিনিধি বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, ঘটনার পর থেকে শূন্যরেখার আশ্রয় অঞ্চল ও আশপাশের এলাকায় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছেন আরএসওর সদস্যরা। তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের রোহিঙ্গাদের কাছে গণমাধ্যমকর্মীদের যেতে দেওয়া হচ্ছে না। যেতে চাইলে অস্ত্রধারীদের জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে।

তবে ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলম বলেন, শূন্যরেখা থেকে পালিয়ে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং এর আশপাশের এলাকায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কড়া নজরদারিতে রেখেছে বিজিবি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিরাপত্তার কারণে সেদিকে কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে বিজিবির বক্তব্য পাওয়া যায় নি।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমেন শর্মা বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, সীমান্তের পরিস্থিতি আপাতত শান্ত আছে। তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশে কিছু রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। তাঁদের সংখ্যা কত, এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না, গণনার কাজ চলছে। রোহিঙ্গাদের কোথায় নেওয়া হবে, এই সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয় নি। বাংলাদেশ ভূখণ্ডে শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত জানানোর পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

About Author

Leave a Reply

Related Post

৪ লাখ টাকার অভাবে নিভে যাবে সাদিয়ার জীবন!৪ লাখ টাকার অভাবে নিভে যাবে সাদিয়ার জীবন!



নিজস্ব প্রতিবেদক, ডন ও বাঙলার কাগজ; শাহিনুর আলম শাহিন, হিলি : হার্টে (হৃদপিণ্ড) তিন-তিনটি ছিদ্র নিয়ে চিকিৎসার অভাবে দিনদিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাদিয়া

ডন ও বাঙলার কাগজে প্রতিবেদন : সেই সাদিয়ার চিকিৎসা হবে ঢাকায়ডন ও বাঙলার কাগজে প্রতিবেদন : সেই সাদিয়ার চিকিৎসা হবে ঢাকায়



নিজস্ব প্রতিবেদন, ডন ও বাঙলার কাগজ : বাঙলার কাগজ এবং আওয়ার ডনে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাদিয়া পারভিনের চিকিৎসা হচ্ছে ঢাকায়। সাদিয়ার হৃদপিণ্ডে ৩টি

প্রিয় পাঠক, ভালো মানুষ এবং ভালো কাজের প্ল্যাটফর্ম আওয়ার ডনে আপনাকে স্বাগতম

X