The Our Don Don Education মুখোশ পরে হলে ঢুকে ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম, থমথমে ক্যাম্পাস

মুখোশ পরে হলে ঢুকে ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম, থমথমে ক্যাম্পাস




নিজস্ব প্রতিবেদক, ডন; বরিশাল : বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের একটি কক্ষে ঢুকে এক ছাত্রলীগ নেতাকে বেধড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে হেলমেট ও মুখোশ পরা দুর্বৃত্তরা। এ সময় মহিউদ্দীন আহমেদ সিফাত নামের ওই নেতার কক্ষে থাকা তাঁর দুই অনুসারীকেও মারধর করা হয়। তাঁদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) ভোর পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে এই ঘটনা ঘটে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে আছেন। নিরাপত্তার জন্য ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। তবে মহিউদ্দীন আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

ঘটনার বিষয়ে বরিশাল বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, হামলার পর তাঁরা হলটি পরিদর্শন করেছেন। সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে হামলাকারী ব্যক্তিদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে গ্রেপ্তারেও অভিযান চলছে। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

শের-ই-বাংলা হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, আজ ভোর পাঁচটার কিছু পর হলের চারতলায় ডাক-চিৎকার শুনে ঘুম ভাঙে। পরে দরজা খুলতে গিয়ে দেখেন বাইরে থেকে ছিটকিনি আটকে রাখা হয়েছে। হলের অন্য সহপাঠীদের কাছে ফোন করে সাহায্য চাইলেও তাঁরাও একই অবস্থার কথা জানান। পরে অন্য হলের সহপাঠীদের ফোন করলে তাঁরা এসে দরজা খুলে দেন। পরে চারতলার ৪০১৬ নম্বর কক্ষে দিয়ে দেখেন আহত অবস্থায় ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দীন আহমেদ, তাঁর অনুসারী ফাহাদ হোসেন ও জিহাদ আহমেদ পড়ে আছেন। কক্ষটির মেঝে, দেয়ালে ছোপ ছোপ রক্ষের দাগ। এরপর তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন :   ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু।

ওই শিক্ষার্থীরা জানান, মহিউদ্দীন আহমেদ ও আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন, হামলাকারী ব্যক্তিরা সংখ্যায় ১৫ থেকে ২০ জন ছিল। তারা সবাই হেলমেট ও মুখোশ পরিহিত ছিল। হাতে ছিল রড় ও ধারালো অস্ত্র। ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে হামলার পর তারা চলে যায়। তাঁদের ধারণা, হলের পকেটগেট থেকে হামলাকারীরা ভেতরে প্রবেশ করে এবং বাইরে ভোলা-বরিশাল মহাসড়কে তাদের বহনকারী গাড়ি ছিল।

ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দীনের অনুসারী ও শের-ই-বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র সৈয়দ রুম্মান বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, কক্ষের বাইরে থেকে ঠকঠক করলে মহিউদ্দীন দরজা খুলে দেন। এরপর সন্ত্রাসীরা মহিউদ্দীনকে এলোপাতাড়ি মারধর করতে শুরু করে। রড় দিয়ে তাঁর পায়ে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকে। এ সময় মহিউদ্দীন আত্মরক্ষার জন্য বারান্দায় গেলে সেখান থেকে ধরে এনে পুনরায় পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এ সময় তাঁর কক্ষে থাকা অপর দুই শিক্ষার্থীকেও মারধর করা হয়। তবে তাঁদের অবস্থা তেমন গুরুতর নয়।

আরও পড়ুন :   নড়াইলে শিক্ষক লাঞ্ছনা : বিচারিক অনুসন্ধানের নির্দেশ হাইকোর্টের।

সৈয়দ রুম্মান বলেন, মহিউদ্দীন আহম্মেদের দুই পা ও হাতের অবস্থা গুরুতর। হাত–পা পিটিয়ে গুরুতর জখম করার পাশাপাশি ছয় থেকে সাতটি স্থানে ধারালো অস্ত্রের জখম রয়েছে। হামালাকারী ব্যক্তিরা হেলমেট ও মুখোশ পরা থাকলেও মহিউদ্দীন কয়েকজনকে চিনতে পেরেছেন বলেও জানান তিনি।

তবে এই হামলার পেছনে কারা জড়িত এবং কী কারণে এই হামলা হয়েছে, সে ব্যাপারে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো কোনো তথ্য পায় নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, মহিউদ্দীন আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অন্যদিকে বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের অনুসারী ছাত্রলীগের আরেকটি পক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় থাকলেও গত বছরের পর তারা আর ক্যাম্পাসে নেই। ওই পক্ষের নেতৃত্বে আছেন অমিত হাসান ওরফে রক্তিম ও ময়িদুর রহমান ওরফে বাকি। বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে প্রথম সংঘাতের সূচনা হয়েছিল গত বছরের ৫ জুলাই রাতে। ওই দিন দিবাগত রাত একটার দিকে ক্যাম্পাসে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় উভয় পক্ষের সাতজন আহত হন।

আরও পড়ুন :   শিক্ষক হত্যা ও লাঞ্ছনার প্রতিবাদে ঢাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহিউদ্দীন আহম্মেদ দীর্ঘদিন ধরে শের-ই-বাংলা হলের চারতলার ৪০১৬ নম্বর কক্ষটি দখল করে থাকছেন। তিনি এই হলের নিয়ন্ত্রণ করতেন। একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এই হামলার ঘটনার পর ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্তা বিরাজ করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. খোরশেদ আলম বাঙলার কাগজ ও ডনকে বলেন, বিষয়টি তাঁরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। পুলিশকে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে এ ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করার প্রক্রিয়া চলছে।

About Author

Leave a Reply

Related Post

সরকারি পলিটেকনিকের শিক্ষকদের বকেয়া বেতনগুলো দিয়ে তাঁদের জীবন বাঁচান।সরকারি পলিটেকনিকের শিক্ষকদের বকেয়া বেতনগুলো দিয়ে তাঁদের জীবন বাঁচান।



কালাম আঝাদ’র কলাম : সরকারি ৪৯টি পলিটেকনিকের ৭৭৭ জন শিক্ষকের ১৯ মাসের বকেয়া বেতন দিয়ে তাঁদের জীবন বাঁচান। তাঁরা গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে আমরণ অনশনে আছেন। এরমধ্যে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত

নটরডেম কলেজছাত্রের মৃত্যু : দুজন কর্মচ্যুত ও একজন সাময়িক বরখাস্ত।নটরডেম কলেজছাত্রের মৃত্যু : দুজন কর্মচ্যুত ও একজন সাময়িক বরখাস্ত।



ডন প্রতিবেদন : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ির চাপায় ঢাকা নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান নিহত হওয়ার ঘটনায় দুজনকে কর্মচ্যুত ও একজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে

প্রিয় পাঠক, ভালো মানুষ এবং ভালো কাজের প্ল্যাটফর্ম আওয়ার ডনে আপনাকে স্বাগতম

X