The Our Don Don Banking, Business, Economy, Commerce and E-Commerce সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ : সীমা গ্রুপকে ঋণ দিয়ে বিপাকে ১০ ব্যাংক

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ : সীমা গ্রুপকে ঋণ দিয়ে বিপাকে ১০ ব্যাংক




নিজস্ব প্রতিবেদক, ডন ও বাঙলার কাগজ; চট্টগ্রাম : সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণে সাতজনের প্রাণহানির ঘটনায় নতুন করে বিপদে পড়েছে সাত ব্যাংক। মিউচুয়াল ট্রাস্ট, মার্কেন্টাইল, পূবালীসহ ১০টি ব্যাংক সীমা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছে হাজার কোটি টাকা। ঋণের এসব টাকা উদ্ধার হওয়া নিয়ে এখন তৈরি হয়েছে সংশয়।

সীমা গ্রুপের তিন কর্ণধারের বিরুদ্ধেই অবহেলাজনিত হত্যা মামলা করেছেন বিস্ফোরণে নিহত এক শ্রমিকের স্ত্রী।

এ ছাড়া বছর তিনেক আগে থেকেই বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণের কিস্তি নিয়মিত দিতে পারছে না এই গ্রুপ। কয়েকটি ব্যাংকে তাঁরা হয়েছে খেলাপি। গ্রুপের কারখানাও একের পর এক বন্ধ হচ্ছে। ঋণ দিয়ে তাই এসব ব্যাংক বিপাকে পড়েছে। অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণ যেন ব্যাংকগুলোর জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে।

জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান বলেন, ‘সীমা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের খোঁজখবর নিতে গিয়ে নানা ধরনের ত্রুটি পাচ্ছি আমরা। একসময় সুনাম থাকলেও এখন বিভিন্ন ব্যাংকে এই গ্রুপের ঋণ জমেছে ৮০০ কোটি টাকারও বেশি। প্রতিষ্ঠানের তিন কর্ণধারের বিরুদ্ধে হয়েছে মামলাও। তাদের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এখন রুগ্ন হয়ে আছে। তদন্ত শেষে আমরা এ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে একটি উপসংহার টানবো।’ খারাপ সময় যাওয়ার কথা স্বীকার করে সীমা অক্সিজেন প্লান্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন উদ্দিন বলেন, ‘হঠাৎ করে বড় ধরনের বিপদে পড়েছি আমরা। আশা করছি এখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারব। তবে এ কাজটি এবার অনেক কঠিন হবে। ব্যাংকে যে ঋণ আছে সেগুলো আমরা পরিশোধ করব। কিন্তু কিছুটা সময় বাড়তি লাগতে পারে।

আরও পড়ুন :   প্রধানমন্ত্রী আজ কর্ণফুলী ড্রাইডক স্পেশাল ইকোনোমিক জোনের উদ্বোধন করবেন

আগে অক্সিজেন প্লান্টের দুর্ঘটনা থেকে মুক্ত হই। এরপর ব্যাংক ঋণ নিয়ে ভাবব।’ পূবালী ব্যাংক চট্টগ্রামের জোনাল প্রধান উপমহাব্যবস্থাপক আখতারুজ্জামান সরকার বলেন, ‘আমি কর্মস্থলে নতুন এসেছি। বিস্তারিত বলতে পারব না। তবে আমাদের শেখ মুজিব রোড শাখায় সীমা গ্রুপের বড় অঙ্কের ঋণ রয়েছে। ঋণের টাকা পরিশোধ করতে তাদের বেশ কয়েক দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠান এখন খারাপ অবস্থায় : মিউচুয়াল ট্রাস্ট, মার্কেন্টাইল ও পূবালী ব্যাংকের কাছে সীমা গ্রুপের ঋণ ছাড়িয়ে গেছে ৮০০ কোটি টাকার ঘর। ২০১৮ সালে গ্রুপের ঋণ ছিল ৮৯২ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে ছিল ৭১২ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন বছরের ব্যবধানে এ গ্রুপের ব্যাংক দায় বেড়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। ব্যাংকের ঋণ এখন নিয়মিত পরিশোধও করতে পারছে না তারা। এ গ্রুপের কাছে পূবালী ব্যাংকের ঋণ ৬০০ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্টের কাছে জমেছে ২০০ কোটি টাকা। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের কাছে তাদের ঋণ ৭০ কোটি টাকা।  গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সীমা অটো রি-রোলিং মিলের কাছে স্বল্পমেয়াদি ব্যাংক ঋণ আছে ৩০০ কোটি টাকার বেশি। আর দীর্ঘমেয়াদি ঋণ আছে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুসারে, সীমা গ্রুপের জাহাজ ভাঙার তিন প্রতিষ্ঠান সীমা স্টিল, এস ট্রেডিং করপোরেশন ও মামুন স্টিল ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬০০ কোটি টাকায় ১২টি পুরোনো জাহাজ আমদানি করে। কিন্তু সর্বশেষ অর্থবছরে লেনদেন নেমে আসে এক-তৃতীয়াংশে। অথচ বছর তিনেক আগেও হাজার কোটি টাকার সম্পদ ছিল সীমা গ্রুপের। তাদের সব প্রতিষ্ঠান ছিল সচল। পরিচালনাগত ব্যর্থতা ও অপরিকল্পিত বিনিয়োগের কারণে গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠান এখন খারাপ অবস্থায় আছে বলে মনে করেন অনেকে।

আরও পড়ুন :   Bangladesh now most ideal place for investment: PM

টাকা পেতে যোগাযোগ বাড়িয়েছে ব্যাংকগুলো : সীমা অক্সিজেনে বিস্ফোরণে সাতজনের প্রাণহানির ঘটনায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন উদ্দিন, তাঁর ভাই পারভেজ উদ্দিন, আশরাফ উদ্দিন ওরফে বাপ্পিসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে গত মঙ্গলবার (৭ মার্চ) রাতে মামলা করেছেন নিহত আবদুল কাদেরের স্ত্রী রোকেয়া বেগম। কারখানা কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও গাফিলতির কারণে এই মৃত্যু হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করেন তিনি। সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাঈদ জানান, মামলার ধারা অনুযায়ী আসামিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড হতে পারে। তার মানে এ মামলা প্রমাণিত হলে সীমা গ্রুপকে ঋণ দেওয়া বিভিন্ন ব্যাংকের বিপদ আরও বাড়বে। তাই অক্সিজেন প্লান্টে দুর্ঘটনার পর ঋণের টাকা পেতে যোগাযোগ বাড়িয়েছে ব্যাংকগুলো। কিন্তু সাড়া পাচ্ছে না মালিকপক্ষের।

আরও পড়ুন :   ভারত এখন বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি।

অক্সিজেনের তিন প্লান্ট বন্ধ হয়েছিল আগেই : অক্সিজেন প্লান্টের দুটি কোম্পানি আছে সীমা গ্রুপের। তার মধ্যে অক্সি অক্সিজেনের তিনটি ও দুর্ঘটনাকবলিত সীমা অক্সিজেন কোম্পানির দুটি প্লান্ট ছিল। অক্সি অক্সিজেন কোম্পানির তিনটি প্লান্ট বন্ধ আছে। আর বিস্ফোরণে সীমার দুটি প্লান্ট ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া সীমা অটো রি-রোলিং মিল ধুঁকছে দেনার দায়ে। তাদের জাহাজভাঙা ইয়ার্ডেও নেই পর্যাপ্ত জাহাজ। এটিও অনেকটা বন্ধের পর্যায়ে রয়েছে।

সীমা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ শফি আশির দশকে বানুর বাজারে একটি চায়ের দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে স্ক্র্যাপ জাহাজে ঠিকাদারি কাজ নেন তিনি। ৯২-৯৩ সালে মাদামবিবির হাটের জাহানাবাদ গ্রামে গড়ে তোলেন শিপব্রেকিং ইয়ার্ড। এর পরে সীমা গ্রুপ গঠন করেন। সীমা বাস সার্ভিস ও অক্সিজেন প্লান্টও গড়ে তোলেন তিনি। পর্যায়ক্রমে গড়ে তোলেন এস ট্রেডিং করপোরেশন, মামুন স্টিল ও ম্যাপস ট্রেডিং। বছর তিনেক আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মোহাম্মদ শফি। এর পরে এসব ব্যবসার হাল ধরেন তাঁর তিন ছেলে মামুন উদ্দিন, পারভেজ উদ্দিন ও আশরাফ উদ্দিন বাপ্পি।

About Author

Leave a Reply

Related Post

২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উত্থাপনে সংসদে অর্থমন্ত্রী।২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উত্থাপনে সংসদে অর্থমন্ত্রী।

0 Comments ">4:24 PM


ডন প্রতিবেদন : ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষণার জন্য ব্রিফকেস হাতে নিয়ে সংসদ ভবনে পৌঁছেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আজ বৃহস্পতিবার (৯ জুন) দুপুর ১২টায় সংসদ ভবনে পৌঁছান

বাংলাদেশের জন্য ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে আইএমএফবাংলাদেশের জন্য ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে আইএমএফ



নিজস্ব প্রতিবেদন, ডন : বাংলাদেশের জন্য ৪.৭ বিলিয়ন (৪৭০ কোটি) ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বাংলাদেশ সময় সোমবার (৩০ জানুয়ারি) রাত ৯টায় অনুষ্ঠিত আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকে

প্রিয় পাঠক, ভালো মানুষ এবং ভালো কাজের প্ল্যাটফর্ম আওয়ার ডনে আপনাকে স্বাগতম

X