নিজস্ব প্রতিবেদক, ডন ও বাঙলার কাগজ; কিশোরগঞ্জ : পল্লীকবি জসিম উদ্দিন তাঁর রচিত ‘ধানক্ষেত’ কবিতায় বলেছেন, ‘পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত/ সবুজে হলুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত/ ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে/ ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলো শুয়েছে মাঠের পরে।’
ঢেউয়ের মতোই খেলে যাচ্ছে ধান গাছের সবুজ পাতা ও শীষ। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শুধু ঘন সবুজের সমারোহ। আর এই সবুজ ধানগাছের ঢেউ দোলানো কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের কৃষকের স্বপ্ন। হেমন্তের বাতাসে রোপা আমন ধানের সবুজ ঢেউ উপজেলার সকল কৃষকের মন ভরিয়ে দিচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যেই শীষে দুধ-দানা গঠন শুরু হবে। আর এমন সবুজ সমুদ্রের ঢেউয়ে দুলে উঠেছে প্রকৃতি।
সরেজমিনে দেখা গেলো, রোপা আমন ধানের শীষে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। ধানের কাঁচা শীষ দেখে আনন্দে বুক ভরে উঠছে কৃষকের। যেন হারিয়ে যায় সবুজ মাঠে। দিগন্ত জোড়া সবুজ ফসলের মাঠ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও বিকশিত করে তুলেছে। আর মাত্র ক’দিন পরেই সবুজ ধানগাছ ও শীষ হলুদ বর্ণ ধারণ করবে। এরপর সোনালী ধানের শীষে ঝলমল করবে ফসলের মাঠ। মাঠ ভরা ফসলের স্বপ্ন দেখে কৃষকদের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের ছোঁয়া। রাশি রাশি সোনালী ধানে ভরে উঠবে কৃষাণীর শূন্য গোলা। ফলে মাঠে দোল খাওয়া নতুন ধানের নতুন স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা।
হোসেনপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় মোট ৫ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৬২৪ মেট্রিক টন। এই এলাকায় আমনে ব্রি ধান-৪৯ বেশি আবাদ করা হয়েছে। এবারও রোপা আমনের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা কৃষকের।
এ বছর সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় দেরিতে রোপা আমন চাষ হলেও ফসলের মাঠ অনেক সুন্দর হয়েছে। ধানের সবল-সতেজ চারা এবং শীষ বের হয়েছে। তাই এবার ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। চলতি আমন মৌসুমে ধানের ভালো ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ধানের ক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে মাঠে সবুজের সমারোহ। ধানের প্রতিটি ক্ষেতে শীষ উকি দিচ্ছে। ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। তাঁরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন। মাঠে সার, কীটনাশক প্রয়োগ এবং আগাছা পরিষ্কার করছেন তাঁরা।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও পরামর্শে চাষাবাদকৃত রোপা আমন ধান অনেক ভালো হয়েছে।
জানতে চাইলে জগদল গ্রামের রিপন সরকার, রোকন উদ্দিন, মোসলেম উদ্দিন এবং আবুল কাশেমসহ আরও কয়েকজন কৃষক বাঙলার কাগজ এবং ডনকে বলেন, ‘চলতি বছর ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছি। আর কয়দিন পরেই ফলন ঘরে তুলতে পারবো।’