The Our Don Don Day মেসি–রোকুজ্জো : কে প্রথম ভালোবেসেছিলো?

মেসি–রোকুজ্জো : কে প্রথম ভালোবেসেছিলো?




নিজস্ব প্রতিবেদন, ডন : ‘শঙ্খবেলা’ সিনেমার সেই গান লিওনেল মেসি ও আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো শোনেন নি। সেই যে বিস্তীর্ণ জলরাশির মাঝে নৌকায় উত্তম কুমার ও মাধবী মুখোপাধ্যায়ের সুরে সুরে আত্মজিজ্ঞাসা, ‘কে প্রথম কাছে এসেছি/ কে প্রথম চেয়ে দেখেছি/ কিছুতেই পাই না ভেবে/ কে প্রথম ভালোবেসেছি/ তুমি না আমি?’।

গানটি না শুনলেও সমস্যা নেই। মানুষের মুখের ভাষা যা-ই হোক, বুকের ভেতরে ভালোবাসার ভাষা তো একই। আজ হয়তো সেই ভাষাতেই চলছে বিশেষ কথোপকথন, অনির্বচনীয় স্মৃতিচারণ- কে প্রথম ভালোবেসেছিলো?

মেসি-রোকুজ্জোর ভালোবাসা, সেখান থেকে দুজনের ঘর বাঁধা—এই গল্প মোটামুটি সবারই জানা। শৈশবে হরমোনের সমস্যাজনিত রোগে ভুগেছেন মেসি। রোকুজ্জো সে সময় তাঁকে ছেড়ে যাননি। কথায় আছে, কৈশোরের প্রেম অপরিণামদর্শী হয়। বানের জোয়ারে ভেসে যায় ভীষণ খরস্রোতা নদীর মতোই। রোকুজ্জো মেসির প্রেমে ভাসতে ভাসতেই আজ তাঁর ঘরে।

গত ডিসেম্বরে কাতারের লুসাইলে বিশ্বকাপ ফাইনালের পর ছবিটি নিশ্চয়ই মনে আছে? বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে পরিবারের সঙ্গে বসে আছেন মেসি। তাঁর সন্তানেরা ট্রফি নিয়ে উন্মত্ত। কিন্তু মেসি-রোকুজ্জো চুপচাপ পাশাপাশি বসে। যেন এ মুহূর্তেরই অপেক্ষায় ছিলেন দুজন, বছরের পর বছর দুজনের পাশাপাশি পথ হাঁটার খুব গুরুত্বপূর্ণ এক মোড় সেটি। মেসি সেই মোড়ের দেখা পেতেন না যদি রোকুজ্জো পাশে না থাকতেন! সমর্থকেরা কিন্তু এমন মনে করতেই পারেন। কথায় আছে, সব সফল পুরুষের পেছনে থাকেন একজন নারী।

রোকুজ্জো মেসির সেই নারী। পাঁচ বছর বয়সে সেই যে রোকুজ্জোর চোখে চোখ পড়েছিল, তারপর সেই যে কড়া মার্কিংয়ে পড়লেন, ট্যাকলও হয়েছে নাকি দু-একবার; কে জানে! তবে রোকুজ্জোর কড়া মার্কিং থেকে পৃথিবীর অন্যতম সেরা ড্রিবলার মেসিও বের হতে পারেননি, আসলে আসতে চান নি। প্রথম প্রেম এমনই হয়। আর প্রথম প্রেমকে ঘরে তুলে নিতে পারলে লোকে তাঁকে ভাগ্যবান বলে। সে হিসেবে মেসি ভাগ্যবান। তা কীভাবে শুরু হয়েছিল এই এই পথচলা? প্রথম ভালোবাসার ডাকটা দিয়েছিল কে?

আরও পড়ুন :   বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী জামায়াত-আলবদরই বিএনপির প্রধান সহযোগী : তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী

মেসি-রোকুজ্জো এ নিয়ে সরাসরি কখনো কিছু বলেন নি। তাই বলে সংবাদকর্মীরা বসে থাকবেন কেন! বিষয় যা–ই হোক, অনুসন্ধানি সাংবাদিকতার মজা না নিলে চলে! মেসি-রোকুজ্জোর প্রেম নিয়ে দিস্তার পর দিস্তা প্রতিবেদন লেখা হয়েছে। জন্মভূমি রোজারিওর মেয়েকেই ভালোবেসেছেন এই আর্জেন্টাইন। দক্ষিণ আমেরিকার বেশির ভাগ তারকার মতো কয়েক ‘নৌকা’য় পা রেখে জীবনের বিস্তীর্ণ সাগর পাড়ি দেননি।

‘শঙ্খবেলা’ সিনেমার সেই গানের মতোই মেসির জীবনে একটাই নৌকা—ইউরোপে গিয়েও তাঁকে ভুলে যাননি। বরং ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে নিজেই জানিয়ে দেন, তাঁর মনের বক্সে একজন ‘স্ট্রাইকার’ আছেন, নাম তাঁর আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো। সেটি ১৯৯৬ সালের কথা। মেসি-স্কাগলিয়া নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজে থাকতে দুজন প্রায়ই পারানা নদীর তীরে গিয়ে বসতেন। আড্ডা দিতেন। তখন রোকুজ্জোও যেতেন তাঁদের সঙ্গে। নদীর মাতাল বাতাসে কি দুজনের মন গলে এক মোহনায় বন্দী হয়েছিলো?

উত্তর অজানা, তবে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘এএস’-এর প্রতিবেদন বলছে, কিউপিডের তীরে সম্ভবত মেসিই আগে বিদ্ধ হয়েছিলেন। সংবাদমাধ্যমটির এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, মেসি ৯ বছর বয়সে পা রাখার আগেই রোকুজ্জোর প্রেমে পড়েছিলেন। তাঁর পরিচিতজনেরা সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করে বলেছেন, একদিন রোকুজ্জো তাঁর প্রেমিকা হবেন, এই নিশানায় সেই বয়সেই মেসি নাকি চিঠি লিখতেন!

আরও পড়ুন :   ৫ মার্চ : আজাদ হিন্দ ফৌজের নীরা আর্য জন্মগ্রহণ করেন।

পরে তো লক্ষ্যভেদ হলো। বিচ্ছেদের বাঁশিও বেজেছিল। মেসি বার্সায় থাকতে রোকুজ্জোর একবার মন ঘুরে গিয়েছিল। রোজারিওর অন্য এক তরুণের প্রেমে মজেছিলেন। সেই প্রেম তিন বছর স্থায়ী হয়েছিল। ২০০৫ সালে এক দুর্ঘটনায় রোকুজ্জো খুব কাছের এক বন্ধুকে হারানোর পর মেসি আর্জেন্টিনায় ফিরে তাঁকে দেখতে যান। রোকুজ্জোর পাশে দাঁড়ান। এরপর ভাঙা আয়নাটা সেই জোড়া লাগল, তারপর কখনো আর চিড় ধরেনি। সেই ‘আয়না’ই এখন মেসির ঘর, জীবনও।

মেসির সেই ‘জীবন’-এর শুরুটা জেনে নেওয়া যাক। ২০১৬ সালে গোল ডটকম এ নিয়ে প্রতিবেদন করেছিল। নিওয়েলস ওল্ড বয়েজ ক্লাবের বয়সভিত্তিক দল যেখানে অনুশীলন করেন, সেই জায়গার নাম মালভিনাস পার্ক। সেদিনও সবাই সেভেন-এ-সাইড ম্যাচের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই দলের ট্রেনার এনরিক ডমিনগুয়েজ টের পেলেন, অদ্ভুত কিছু একটা ঘটছে। লুকাস স্কাগলিয়ার বাবা স্কাগলিয়া সিনিয়রকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘লিও ওখানে কী করে?’

একটু দূরেই অন্যমনস্কভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন ছোট্ট মেসি। স্কাগলিয়ার বাসার দিকে তাঁর মনোযোগী চোখ। ইগলের চোখও বলা যায়! ডমিনগুয়েজ কিছু একটা গড়বড় বুঝতে পেরেই প্রশ্নটা করেছিলেন। স্কাগলিয়া সিনিয়রের উত্তরে রহস্য যেন আরও বাড়ল, ‘সে (মেসি) আমাদের চলে যাওয়ার অপেক্ষায় আছে। কারণ, সে আমাদের বাসায় আসতে চায়।’

ডমিনগুয়েজ এবার আরও বেকায়দায়। তিনি বুঝতে পারছিলেন না, যে ছেলেটি দিনরাতের বেশির ভাগ সময়ই স্কাগলিয়ার বাসায় কাটায়, তার কেন এভাবে অপেক্ষা করতে হবে! প্রশ্নটি স্কাগলিয়া সিনিয়রকে করতেই খুলে গেল রহস্যের দুয়ার, ‘সাপ্তাহিক ছুটি তো, লুকাসের কাজিন আন্তোনেল্লা শনিবার ও রোববার এ বাসায় আসে। লিও ওকে পছন্দ করে।’

আরও পড়ুন :   ভক্তদের ঈদের শুভেচ্ছা জানালেন শাহরুখ-সালমান।

লুকাস স্কাগলিয়ার বাড়িতে তাঁর সঙ্গে নিচতলায় প্লেস্টেশন খেলার সময় আন্তোনেল্লাকে প্রথম দেখেছিলেন মেসি। আর্জেন্টাইন তারকা নাকি তখনই বুঝে গিয়েছিলেন, এ মেয়েই হবে তাঁর সব সর্বনাশের মূল! অর্থাৎ প্রথম দেখাতেই কিউপিডের তীরে বিদ্ধ! মেসির ভক্তরা কল্পনার মানসপটে ভেবে নিতে পারেন—বাসার ওপরতলা থেকে রোকুজ্জো নেমে এসে দুজনকে জিজ্ঞাসা করছেন, কিছু লাগবে কি না। আর মেসি দেখলেন, সাত আসমান থেকে এক ‘পরী’ নেমে এসে তাঁর খোঁজখবর নিচ্ছে!

মেসির বন্ধুরা পরে সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, কৈশোরে রোকুজ্জো যতবারই মেসির কাছাকাছি এসেছেন, গোটা দুনিয়ার ডিফেন্ডারদের ত্রাস এই আর্জেন্টাইন নাকি ততবারই লজ্জাবতীর মতো কুঁকড়ে গেছেন।

মেসির সে সময়েরই এক বন্ধু ডিয়েগো গোল ডটকমকে বলেছিলেন আসল ঘটনা। ঠিক ঘটনা বলে সমস্যা বলাই ভালো, ‘মেয়েদের সঙ্গে আমাদের আচরণ ছিলো কাপুরুষোচিত। কাউকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলার মতো সাহস আমাদের ছিল না।’

তাহলে সম্ভবত কেউ কাউকে মুখে কিছু বলেন নি। কথা হয়েছিলো চোখের ভাষায়, মেসি বার্সায় যোগ দেওয়ার পর সম্ভবত সাময়িক বিচ্ছেদও হয়েছিল সেসব অক্ষরমালায়, আবার সেই চোখের ভাষাতেই জোড়া লেগেছিল দুটো হৃদয়, তারপর একসময় বিয়ে হলো, সন্তান হলো, সুখের সংসার হলো। দুজনে এতটা পথ পেরিয়ে আসায় ‘কে প্রথম ভালোবেসেছিলো’, প্রশ্নের উত্তর খোঁজার প্রয়োজন সত্যি ফুরিয়েছে।

তাঁদের গোপন কথা গোপনই থাকুক আজ ভালোবাসা দিবসে, সেটাই তো প্রেমের সৌন্দর্য!

About Author

Leave a Reply

Related Post

৭ মার্চ : রমনার রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু।৭ মার্চ : রমনার রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু।

0 Comments ">11:58 AM


ডন প্রতিবেদন : আজ ৭ মার্চ। আজকের দিনটি গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে বছরের ৬৬তম দিন। এ হিসাবে, বছর শেষ হতে আরও ২৯৯ দিন বাকি রয়েছে। আজকের এইদিনে রমনার রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক

প্রিয় পাঠক, ভালো মানুষ এবং ভালো কাজের প্ল্যাটফর্ম আওয়ার ডনে আপনাকে স্বাগতম

X